ঢাকা, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫ | ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ | ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম

যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে স্বাক্ষর ইসরায়েল ও হামাসের, গাজায় বাঁধভাঙা উল্লাস

যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে স্বাক্ষর ইসরায়েল ও হামাসের, গাজায় বাঁধভাঙা উল্লাস

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এ খবরে গাজায় এখন বাঁধভাঙা উল্লাস। দীর্ঘ ২ বছরের ইসরায়েলি বর্বরতার পর এলো যুদ্ধবিরতির ঘোষণা। যুদ্ধবিরতির এই প্রথম দফার স্থায়িত্ব হবে ৬ সপ্তাহ। এই ছয় সপ্তাহে নিজেদের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর পরিবর্তে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে।

চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বুধবার রাতেই আনন্দ মিছিল বের করেন গাজার দক্ষিণাঞলীয় শহর খান ইউনিসের বাসিন্দারা। কিশোর তরুণরা বাঁশি-খঞ্জনি-ড্রাম বাজিয়ে, নেচে গেয়ে উল্লাস শুরু করেন। এ খবরে উচ্ছ্বাসের জোয়ার বইছে গাজাবাসীদের মধ্যে। কেউ খুশিতে কাঁদছেন-হাততালি দিচ্ছেন, কেউ বাঁশি বাজাচ্ছেন, কেউ গান গাইছেন-নাচানাচি করছেন এবং চিৎকার করে বলছেন ‘আল্লাহু আকবর’। 

Palestinians celebrate on a street following the news that Israel and Hamas have agreed on Wednesday to the first phase of Trump's plan for Gaza, in Khan Younis

গত ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার স্থানীয় সময় বিকেলে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও দপ্তর হোয়াইট হাউসে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন একটি পরিকল্পনার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েল ও মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ মিসর ও কাতার সম্মতি দিলেও হামাস তখনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। পরে ৩ অক্টোবর শুক্রবার হামাস সম্মতি জানানোর পরের দিন ৪ অক্টোবর ইসরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেন ট্রাম্প। তার পর ৬ অক্টোবর মিসরের লোহিত সাগর তীরবর্তী পর্যটন শহর শারম আল শেখ- এ ট্রাম্পের প্রস্তাবের ওপর বৈঠক শুরু হয় ইসরায়েল, হামাস, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের মধ্যে। সেই বৈঠকে দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা চলার পর গতকাল রাতে ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রাথমিক পর্যায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বাক্ষর করেছে ইসরায়েল-হামাস। এই পর্যায়টির স্থায়িত্ব হবে ৬ সপ্তাহ। এই ছয় সপ্তাহে নিজেদের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর পরিবর্তে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে।

ইমান আল কৌকা নামের এক তরুণী এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।  তিনি বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন, আজ আমাদের দুঃখেরও দিন। এটা এমন দিন যার জন্য আমরা হাসব— আবার যুদ্ধে আমরা যাদের হারিয়েছি, যা যা হারিয়েছে— সেসব স্মরণ করে কাঁদব। 

Gaza ceasefire deal brings hope after years of death and devastation |  Crimes Against Humanity News | Al Jazeera

৫ সন্তানের মা ঘাদা এই খবর শোনার পর থেকে কাঁদছেন। তিনি বলেন, হ্যাঁ- আমি কাঁদছি, কিন্তু এটা আনন্দের অশ্রু। মনে হচ্ছে, নতুন করে আবার আমাদের জন্ম হলো। আশা করছি, এই ভয়াবহ যুদ্ধের শেষ হচ্ছে। গাজার প্রধান শহর গাজা সিটির বাসিন্দা ছিলেন তিনি। যে বাড়িতে তারা থাকতেন, সেটি ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর গত ১৫ মাস ধরে পরিবারের অন্য সদস্যসহ তাঁবুতে বসবাস করছেন ঘাদা।

ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় বাড়ি ঘর হারিয়ে গত বছর খান ইউনিসের দেইর আল বালাহ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন গাজা সিটির অপর বাসিন্দা আহমেদ দাহমান।  তিনি জানান, ইসরায়েলের বাহিনীর বোমার আঘাতে বাড়িঘরের পাশাপাশি নিজের বাবাকেও হারিয়েছেন তিনি, কিন্তু তাকে দাফন করতে পারেননি। ধ্বংসস্তুপের মধ্যে বাবার মরদেহকে রেখেই নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটতে হয়েছে তাদের। অবশেষে গাজায় রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে এবং আমাদের জীবন রক্ষা পাচ্ছে— এটা আনন্দের খবর তবে আমি যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত। আমরা যখন ফিরব, তখন দেখব যে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। আমার বাবার লাশ ধ্বংসস্তূপের তলায় রেখে পালাতে বাধ্য হয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে আমার প্রথম কাজ হবে বাবার দেহাবশেষ খুঁজে বের করে তার দাফন সম্পন্ন করা।