জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন মার্গারেট থ্যাচারকে নিজের আদর্শ মানা সানায়ে তাকাইচি। তিনি সামাজিকভাবে বেশ রক্ষণশীল ও সমকামী বিবাহেরও ‘ঘোরতর বিরোধী’। শনিবার (৪ অক্টোবর) ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)’র প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন এবং সম্ভবত এই মাসের শেষের দিকে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
তাকাইচি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি তার মন্ত্রিসভায় নারীর সংখ্যা বাড়িয়ে ‘নর্ডিক’ দেশগুলোর মতো করবেন। জাপানের রাজপরিবারে যেন শুধু পুরুষরাই উত্তরাধিকারী হন। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শিগিরু ইশিবার মন্ত্রিসভায় মাত্র দু’জন নারী মন্ত্রী ছিলেন।
৬৪ বছর বয়সী তাকাইচি নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে ‘সচেতনতা বাড়ানোর আশা’ প্রকাশ করেছেন এবং নিজের মেনোপজের অভিজ্ঞতা নিয়েও খোলাখুলি কথা বলেছেন। এই ধরনের ইঙ্গিত দেওয়া সত্ত্বেও, লিঙ্গ সংক্রান্ত নীতিতে তার অবস্থান রক্ষণশীল এলডিপি’র দিকেই ঝুঁকে রয়েছে। তিনি ১৯ শতকের একটি আইন সংস্কারের বিপক্ষে। আইনটিতে বিবাহিত দম্পতিকে একই পদবি গ্রহণ করতে হয়। এ আইনের ফলে অধিকাংশ জাপানি নারী স্বামীর পদবি গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
টোকাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও লিঙ্গ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইউকি সুজি বলেন, তাকাইচির ‘নারী অধিকার বা জেন্ডার সমতা নীতিতে কোনো আগ্রহ নেই। সুতরাং, পূর্ববর্তী এলডিপি সরকারের তুলনায় এই নীতিগত ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। একজন নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতীকী গুরুত্ব ‘খুবই তাৎপর্যপূর্ণ’। কিন্তু ফল অর্জনের চাপ থাকবে অনেক বেশি এবং যদি তিনি ব্যর্থ হন, তবে এটি ‘নারী প্রধানমন্ত্রীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা’ তৈরি করতে পারে।
গত বছর সাবেক বিমানবালা মিৎসুকো তোত্তোরি জাপান এয়ারলাইন্সের প্রধান হন। কর্পোরেট জগতে এটি একটি বিরল ঘটনা। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ও সীমিত শিশু পরিচর্যার সুযোগ নারীদের পিছিয়ে রাখে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে জাপানে ২০২১ সালে ব্যবস্থাপনা পদে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে কম— মাত্র ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২৫ সালের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-এ জাপান ১৪৮টি দেশের মধ্যে ১১৮তম অবস্থানে ছিল।
রাজনীতিতেও নারীদের প্রতিনিধিত্ব কম। সংসদের নিম্নকক্ষে নারী আইনপ্রণেতার সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ মাত্র। এর একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হলেন তিন মেয়াদের টোকিওর গভর্নর য়ুরিকো কোইকে, যিনি প্রি-স্কুল শিশুদের জন্য বিনামূল্যে ডে-কেয়ার কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি নারী-বান্ধব নীতি ঘোষণা করেছেন। নারী সংসদ সদস্যরাও গৃহিণীর দ্বৈত দায়িত্ব পালনের কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছেন— যা পুরুষদের ভাবনায়ও আসে না।
এই অল্পসংখ্যক নারীও নিয়মিতভাবে লিঙ্গ-বৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হন। জাপানে ‘হ্যাশট্যাগ মি ট’ আন্দোলনও তেমন সাড়া ফেলেনি। কারণ যৌন নিপীড়নের শিকার নারীরা সামনে আসতে ভয় পান। যারা সাহস করে এসেছেন— তারা প্রশংসা পেয়েছেন ঠিকই, তবে অনলাইনে ঘৃণার মুখেও পড়েছেন।