ঢাকা, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫ | ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ | ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা চালানোর ২ বছর

দুই বছরে গাজায় ২ লাখ টন বিস্ফোরক ফেলেছে ইসরায়েল

দুই বছরে গাজায় ২ লাখ টন বিস্ফোরক ফেলেছে ইসরায়েল
  • নিহত ৬৭১৩৯, নিখোঁজ ৯ হাজার
  • ২০ হাজারের বেশি শিশু, ১২৫০০ নারী 
  • পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন ২৭০০টির বেশি
  • গাজার ৯০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস 
  • জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ২১ লাখেরও বেশি মানুষ 
  • মাওয়াসিকেও ১৩০ বারের বেশি বোমা হামলা
  • ৩৮টি হাসপাতাল ও ৯৬টি ক্লিনিক ধ্বংস
  • ১৬৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৮৩৫ মসজিদ পুরোপুরি ধ্বংস
  • নিহত ১৬০০-এর বেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী
  • মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছে সাড়ে ৬ লাখ শিশু 

ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বর্বরতার দুই বছর পূর্ণ হলো  আজ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা উপত্যকার ৮০ শতাংশ এলাকা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় শুরু হয় একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা। যা “হামাস নির্মূল” অভিযানের নামে এখনও অব্যাহত রয়েছে। দুই বছর পার হলেও রক্ত আর ধ্বংসের দাগ এখনো শুকায়নি। যুদ্ধবিরতি নিয়ে বারবার আলোচনা হলেও বরং ইসরায়েলের আগ্রাসী মনোভাব অস্থির করে রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যকে।

ইসরায়েলি দখলদারের বিরুদ্ধে দু’বছর আগের এই দিনেই তেল আবিববে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় সেদিন থেকেই গাজায় তাণ্ডব শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। শিশুদের চিৎকার, মায়ের আর্তনাদ আর ভেঙে পড়া ভবনের ধুলোয় হারিয়ে গেছে এক সময়ের জীবন্ত শহর গাজা। গোটা উপত্যকাই যেন পরিণত হয়েছে কবরস্থানে। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রসন শুরুর পর কেটে গেছে ঠিক দুই বছর। এখনো গাজার মাটি কেঁপে ওঠে বোমার শব্দে, বাতাসে ভাসে মৃত্যুর গন্ধ।

A divided Israel marks 2 years since Oct. 7 attack as war in Gaza grinds on  and hostages languish - The Boston Globe

ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের কারণে ইরান, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন ও কাতারেও একাধিকবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার দুই বছরেও থামেনি ইসরায়েলি বর্বরতা। যুদ্ধবিরতি নিয়ে বারবার আলোচনা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। যুদ্ধ থামাতে বিভিন্ন সময় আলোচনা হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ, যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করছেন ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি গাজায় বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও এরপরও ইসরায়েলি হামলায় অন্তত আরও ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সব বন্দি মুক্তিতে সম্মতি জানিয়েছে হামাস।  তাতেও গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থামেনি।

এই দু’বছরে উপত্যকাটিতে  ২ লাখ টনের বেশি বিস্ফোরক ফেলেছে ইসরায়েল। রোববার ইসরায়েলি আগ্রাসনের দুই বছরকে কেন্দ্র করে নতুন এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গাজা সরকারের জনসংযোগ কার্যালয়। এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলের হামলায় এ পর্যন্ত ৭৬ হাজার ৬০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বা নিখোঁজ আছেন। এর মধ্যে ৬৭ হাজার ১৩৯ জনের মৃত্যুর তথ্য হাসপাতাল থেকে নিশ্চিত হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ, যাদের অনেককে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী, শিশু ও প্রবীণ মানুষ। এর মধ্যে ২০ হাজারের বেশি শিশু এবং ১২ হাজার ৫০০ নারী নিহত হয়েছেন। পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এমন ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৭০০ টির বেশি। আরও ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে কেবল একজন সদস্য জীবিত আছেন।

After 2 years of Israel-Hamas war, a systematic and brutal conflict  continues amid glimpses of potential peace - ABC News

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে গাজার অবকাঠামোর ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার জমির ৮০ শতাংশের বেশি দখল করে নিয়েছে দখলদার বাহিনী। দুই বছরের মধ্যে ২১ লাখেরও বেশি মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, অনেকেই একাধিকবার জায়গা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। দুই বছরে গাজায় ২ লাখ টনের বেশি বোমা ও বিস্ফোরক নিক্ষেপ করা হয়েছে। মানবিক সহায়তার জন্য নির্ধারিত ‘নিরাপদ এলাকা’ আল-মাওয়াসিকেও ১৩০ বারের বেশি বোমা হামলা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলায় ৩৮টি হাসপাতাল ও ৯৬টি ক্লিনিক ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৯৭টি অ্যাম্বুলেন্স টার্গেট করা হয়েছে। নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৬০০-এর বেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। নিহত হয়েছেন ২৫৪ সাংবাদিক, ১৪০ সিভিল ডিফেন্স সদস্য এবং ৫৪০ মানবিক সহায়তাকর্মী। এছাড়া, ১ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা নেই। বিদেশে চিকিৎসার অনুমোদন পাওয়া ২২ হাজার রোগী এখনো গাজার ভেতরেই আটকা। এছাড়া ৬ লাখ ৫০ হাজার শিশু মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছে। দুধ, ওষুধ আর খাবারের তীব্র অভাবে জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, গাজার ২৪ লাখ মানুষের প্রায় সবাই মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল এবং তারা ‘অভূতপূর্ব বঞ্চনার শিকার। গাজার ৯৫ শতাংশ বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। নিহত হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী, ৮৩০ শিক্ষক এবং প্রায় ২০০ গবেষক ও শিক্ষাবিদ। ধর্মীয় স্থানগুলোও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে ৮৩৫টি মসজিদ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি গির্জা। কবরস্থানও বুলডোজার চালিয়ে বা বোমা মেরে ধ্বংস করা হয়েছে। গাজার ১৫টি খাত মিলিয়ে সরাসরি ক্ষতি হয়েছে ৭০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে কেবল আবাসন খাতে ক্ষতি ২৮ বিলিয়ন, স্বাস্থ্য খাতে ৫ বিলিয়ন ও শিক্ষা খাতে ৪ বিলিয়ন ডলার। চাষযোগ্য জমি ও মৎস্য খাত প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।