এবার চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বাগরাম ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইচ্ছার বিরোধিতা করেছে নয়াদিল্লি। ভারত এমন এক সময়ে এই অবস্থান ব্যক্ত করল, যখন আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির নয়াদিল্লি সফরের দিন–তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি দখল নেওয়ার চেষ্টা প্রতিহত করতে তালেবান, পাকিস্তান, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারত।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ‘মস্কো ফরম্যাট কনসালটেশনস অন আফগানিস্তান’ শীর্ষক আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা কঠোর ভাষায় যৌথ বিবৃতি জারি দিয়েছেন। এতে যদিও সরাসরি বাগরামের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে বলা হয়েছে— ‘অংশগ্রহণকারীরা আফগানিস্তান ও পার্শ্ববর্তী দেশে অন্য কোনো দেশের সামরিক অবকাঠামো স্থাপনের চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেছেন। এটি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে।’
মস্কোতে অনুষ্ঠিত এ ধরনের সপ্তম সভায় আফগানিস্তান, ভারত, ইরান, কাজাখস্তান, চীন, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন। অতিথি হিসেবে বেলারুশের একটি প্রতিনিধিদলও উপস্থিত ছিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের প্রতিনিধিদল এ সভায় অংশগ্রহণ করেছে, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি।’
গত ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘বাগরাম ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এটি তালেবানকে বিনা মূল্যে দিয়েছিলাম, এখন আমরা চাই বিমানঘাঁটি ফিরে পাব।’ দুই দিন পরে তিনি ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘যদি আফগানিস্তান বাগরাম বিমানঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফেরত না দেয়, ভয়ানক ঘটনা ঘটতে পারে।’ তালেবান অবশ্য ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আফগানরা কখনোই তাদের ভূমি কাউকে হস্তান্তর করতে দেবে না।’
এবার ভারতের অংশগ্রহণ ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে একটি বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মুত্তাকির ভারত সফরও হবে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর। মুত্তাকি এ সপ্তাহে ভারতের প্রথম সফরে যাচ্ছেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তাঁকে ৯ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত নয়াদিল্লি সফর করার অনুমতি দিয়েছে। মুত্তাকি তালেবান নেতাদের জন্য প্রযোজ্য নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত হওয়ায় তাঁর এই অনুমতির প্রয়োজন ছিল।
মস্কো ফরম্যাটের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অংশগ্রহণকারীরা আফগানিস্তানকে স্বাধীন, একত্রিত ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তারা দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় স্তরে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। আফগানিস্তানকে সমর্থন করার মাধ্যমে দ্রুত সময়ে সন্ত্রাসের উচ্ছেদ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আফগান মাটি প্রতিবেশী দেশ ও অন্যান্য দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকির উৎস না হয়। অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, সন্ত্রাস আফগানিস্তান, অঞ্চলের ও বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।