নোবেল পুরস্কার ২০২৫-এর ঘোষণা শুরু হয়ে গেল। আজ বাংলাদেশ সময় সোমবার বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে সুইডেনের স্টকহোম থেকে এ বছরের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট। এটিই এ বছর ঘোষণা করা প্রথম নোবেল পুরস্কার। এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মেরি ব্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল এবং শিমন সাগাগুচি। শরীর কীভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে তা নিয়ে গবেষণার জন্য তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রতিবছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল ঘোষণা করে সুইডেনের স্টোকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট।
পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স হলো রোগ-প্রতিরোধ বা ইমিউন সিস্টেমের একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের নিজস্ব উপাদান এবং ক্ষতিকারক নয় এমন বহিরাগত উপাদানের (যেমন: কিছু খাদ্য উপাদান, উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া) বিরুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিত বা অতিরিক্ত প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়া রোধ করা হয়। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, তাদের এই আবিষ্কার নতুন গবেষণাক্ষেত্রের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে এবং ক্যানসার ও অটোইমিউন রোগের মতো জটিল অসুস্থতার চিকিৎসা উদ্ভাবনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
নোবেলজয়ী এই বিজ্ঞানীরা পাবেন একটি মেডেল, একটি সনদপত্র এবং মোট ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা। যেসব বিভাগে একাধিক নোবেলজয়ী থাকবেন, তাঁদের মধ্যে এই ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা ভাগ হয়ে যাবে। বর্তমান বাজারে এর মান প্রায় ১২ লাখ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রায় ১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
১৯৯৫ সালে শিমোন সাকাগুচি প্রথমবার দেখান, ইমিউন টলারেন্স কেবল থাইমাসে ক্ষতিকর কোষ ধ্বংস হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি এক নতুন শ্রেণির কোষ আবিষ্কার করেন, যা দেহকে অটোইমিউন রোগ থেকে রক্ষা করে। ২০০১ সালে মেরি ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড র্যামসডেল আবিষ্কার করেন, কিছু বিশেষ ধরনের ইঁদুর সহজেই অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হয়, কারণ তাদের ফক্সপি৩ জিনে ত্রুটি থাকে। পরে দেখা যায়, মানুষের ক্ষেত্রেও এই জিনে মিউটেশন হলে ভয়াবহ রোগ আইপেক্স হয়। এরপর ২০০৩ সালে সাকাগুচি প্রমাণ করেন, ফক্সপি৩ জিন নিয়ন্ত্রণ করে তিনি যে বিশেষ কোষ আবিষ্কার করেছিলেন, তাদের বিকাশ। এই কোষগুলোই রেগুলেটরি টি সেলস নামে পরিচিত, যা অন্য প্রতিরোধক কোষকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।তাদের এই গবেষণা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ক্যানসার ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসা, এমনকি সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপনেও এই আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে এসব চিকিৎসা পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে।
মেরি ই. ব্রাঙ্কোর জন্ম ১৯৬১ সালে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেমস বায়োলজি-তে সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।
ফ্রেড র্যামসডেলের জন্ম ১৯৬০ সালে। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক সোনোমা বায়োথেরাপিউটিকস-এর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা।
শিমোন সাকাগুচির জন্ম ১৯৫১ সালে। ১৯৭৬ সালে এমডি এবং ১৯৮৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে ওসাকার ইমিউনোলজি ফ্রন্টিয়ার রিসার্চ সেন্টার, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর হিসেবে কর্মরত।