 
																		বিয়ে করেছেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। তার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নামিয়া আমিন। বুধবার (২২ অক্টোবর) এক বার্তায় দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি জানিয়েছেন জেমসের ম্যানেজার রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন। তিনি জানান, জেমস-নামিয়ার পরিচয় ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে। ২০২৪ সালের ১২ জুন তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে ২০২৫ সালের ৮ জুন এই দম্পতির সংসারে আসে পুত্র সন্তান। তার নাম জিবরান আনাম। জেমস বর্তমানে নামিয়ার সঙ্গে ঢাকার বনানীতে বাস করছেন। নামিয়ার বাবা ও মা স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। নামিয়াও যুক্তরাষ্ট্রে বড় হয়েছেন। সেখানে নৃত্যশিল্পী হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে।
পুত্রসন্তান জন্মের অনুভূতি জানাতে গিয়ে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাসলেন জেমস। এরপর কতক্ষণ দম নিয়ে বললেন, ‘এ অনুভূতি অসাধারণ! এটা আসলে কীভাবে প্রকাশ করব, সে ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তবে এতটুকু বলব, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, তিনি আমাকে সুস্থ সন্তান দান করেছেন। সবাই মা ও সন্তানের জন্য দোয়া রাখবেন।’
জেমসের প্রথম স্ত্রী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রথি। ১৯৯১ সালে বিয়ের পর ২০০৩ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। প্রথম সংসারে জেমসের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। এরপর জেমস বিয়ে করেন বেনজির সাজ্জাদকে। ২০১৪ সালে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে বেনজীর সাজ্জাদের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় জেমসের। সেই পরিবারে এক মেয়ে আছে। এরপর এক দশক একা কাটিয়েছেন এই রকস্টার।

২০২৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে দেখা হয় নামিয়ার সঙ্গে। লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি অনুষ্ঠানে দুজনের পরিচয় হয়, আর এই পরিচয় থেকে প্রণয় ও বিয়ে। তবে এটি কোনো কনসার্ট ছিল না, এমনকি জেমস সম্পর্কে আগে থেকে তেমন কিছু জানতেনও না নামিয়া! পরিচয়ের এক বছর পর ২০২৪ সালের ১২ জুন পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ঢাকায় তাঁদের বিয়ে হয়। ২০২৫ সালের ৮ জুন নিউইয়র্কের হান্টিংটন হাসপাতালে দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় জন্ম হয় জিবরানের। জেমসসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য তখন সঙ্গে ছিলেন। এক মাস যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পর সন্তান নিয়ে দেশে ফেরেন তাঁরা। জেমসের তৃতীয় স্ত্রী নামিয়ার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে, তিনি সেখানের জন জে কলেজ থেকে ক্রিমিনাল জাস্টিসে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।
১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন জেমস। তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বাবার সঙ্গে গান নিয়ে অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন জেমস। চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে থাকা শুরু করেন। সেখানে থেকেই তার সংগীতজীবনের শুরু।
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ব্যান্ডদল 'ফিলিংস'। জেমস ছিলেন সেই ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট। ১৯৮৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম 'স্টেশন রোড' প্রকাশিত হয়। ১৯৮৮ সালে 'অনন্যা' নামের অ্যালবাম প্রকাশের পর সুপারহিট হয়ে যান তিনি। এরপর ১৯৯০ সালে 'জেল থেকে বলছি', ১৯৯৬ সালে 'নগর বাউল', ১৯৯৮ সালে 'লেইস ফিতা লেইস' এবং ১৯৯৯ সালে 'কালেকশন অফ ফিলিংস' অ্যালবামগুলো 'ফিলিংস' থেকে বের করা হয়। 'নগর বাউল' ব্যান্ডের অ্যালবামগুলো হলো, 'দুষ্টু ছেলের দল' ও 'বিজলী'। জেমসের একক অ্যালবামগুলো হলো—'অনন্যা', 'পালাবি কোথায়', 'দুঃখিনী দুঃখ করো না', 'ঠিক আছে বন্ধু', 'আমি তোমাদেরই লোক', 'জনতা এক্সপ্রেস', 'তুফান' ও 'কাল যমুনা'। জেমসের গাওয়া সেরা ১০ গানের তালিকায় আছে—বাংলাদেশ, জেল থেকে বলছি, মা, দুঃখিনী দুঃখ করো না, লেইস ফিতা লেইস, বাবা, বিজলী, দুষ্টু ছেলের দল, মীরাবাঈ, পাগলা হাওয়া, গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া।
চলচ্চিত্র প্লেব্যাকেও সফল হয়েছেন জেমস। ২০১৪ সালে 'দেশা: দ্য লিডার' ও ২০১৭ সালে 'সত্ত্বা' ছবির 'তোর প্রেমেতে অন্ধ আমি' গানের জন্য দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। শুধু দেশ নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপক জনপ্রিয় এই তারকা শিল্পী। বাংলা গানের পাশাপাশি 'গ্যাংস্টার' ছবির 'ভিগি ভিগি' গানটির মাধ্যমে বলিউডে যাত্রা শুরু হয় তার। এরপর 'ও লামহে' ছবিতে 'চল চলে' এবং 'লাইফ ইন অ্যা মেট্রো' ছবির 'আলবিদা' ও 'রিস্তে' শিরোনামের গানগুলো গেয়ে আলোচিত হয়েছেন তিনি।