জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অভিন্ন কয়েকটি দাবিতে ২য় ধাপে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতসহ চারটি রাজনৈতিক দল। অন্য দলগুলো হলো- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১. জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। ২. নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। ৩. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। ৪. গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। ৫. বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫-দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমাদের ৫-দফা গণদাবি ইতোমধ্যেই জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাই দেশের জনগণ এ দাবির প্রতি ব্যাপক সমর্থন দিয়ে আন্দোলনে শামিল হয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত অবিলম্বে জনগণের ৫-দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। সরকার যদি যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে এবং সমস্যার দ্রুত সমাধান না করে তাহলে দেশের জনগণ ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য কঠোর হতে বাধ্য হবে।
ঘোষিত কর্মসূচি- ০১ অক্টোবর থেকে ০৯ অক্টোবর: সারাদেশে গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা, গোলটেবিল বৈঠক ও সেমিনার। ১০ অক্টোবর: রাজধানীসহ সকল বিভাগীয় শহরে গণমিছিল। ১২ অক্টোবর: সারাদেশে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান।
এদিন বেলা ১১টায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের ২য় ধাপের কর্মসূচি ঘোষণার জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমাদ আবদুল কাইয়ুম, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী প্রমুখ।
যুগপৎ আন্দোলনের ২য় ধাপে কর্মসূচি হচ্ছে- ১. ০১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দফা গণদাবীর পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে গণসংযোগ। ২. ১০ অক্টোরব’২৫ ঢাকায় ও বিভাগীয় শহরে গণমিছিল। ৩. ১২ অক্টোবর’২৫ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান। দেশের অন্যতম প্রধান ধর্ম হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গা উৎসবের কারণে প্রথম দিকে রাজপথে কোন কর্মসূচি রাখা হয় নাই।
এদিন বিকালে গণমাধ্যমে প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৫ দফা দাবীতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজি ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নেতৃদ্বয় বলেন, দেশ এখনো গভীর সংকট ও ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জিত হবার আগ পর্যন্ত আমাদের অনেক কাজ বাকি সকলকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এসব কর্মসূচিেতে অংশ গ্রহণ ও সর্বাত্মক সফল করতে নেতৃদ্বয় আহবান জানান এবং ইন্টেরিম প্রশাসনকে দাবি সমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জোর দাবি জানান। নইলে দেশের ছাত্র জনাতার মাধ্যমে তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে মর্মেও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
তাদের কর্মসূচিগুলো হলো- ১. ২ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, শাপলা গণহত্যা, পিলখানাও জুলাই হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার এবং ফ্যসীবাদের দোসরদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীতে, সারাদেশে গণ সংযোগ, জনমত তৈরি ও প্রচারপত্র বিতরণ। ২. ১০ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির গণ মিছিল।
এর আগে, সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে প্রেরিত যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনী ভিত্তিসহ ৫ দফা দাবী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। বিবৃতিতে সংগঠনের আমীর মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করায় জাতি আজ রাজনৈতিক সঙ্কট, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও বিপর্যয়ের গভীর খাদে পতিত হচ্ছে। ইসলামী শক্তিকে দমিয়ে রাখার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে এবং জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে বিদেশি প্রভুদের খুশি করার নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছি—জনগণের ঈমানি চেতনা ও জুলাই বিপ্লবের গণআকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করার যে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করা হবে।
ঘোষিত কর্মসূচি হলো- ১. ০১ অক্টোবর থেকে ০৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ব্যাপক গণসংযোগ কর্মসূচি। এ সময় জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি ও ৫ দফা গণদাবীর পক্ষে মতবিনিময় সভা, গোলটেবিল বৈঠক, সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। ২. ১০ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় গণমিছিল। ৩. ১২ অক্টোবর সারাদেশে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি পেশ। সরকারকে জনগণের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে সতর্ক করা হবে যে, জনগণের ন্যায্য দাবি পূরণে ব্যর্থ হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।