হজের সরকারি প্যাকেজ ঘোষণার দুই দিন বাদে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় তিনটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন এজেন্সি মালিকরা। মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি হোটেলে এসব হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে হাবের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি মাধ্যমের মতো এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনাতেও একটি প্যাকেজ বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে খাওয়া ও কোরবানিসহ বিশেষ হজ প্যাকেজের খরচ ঠিক করা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর সাধারণ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে ব্যয় হবে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আর সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার সাধারণ প্যাকেজের ব্যয় বেড়েছে ২৭ হাজার টাকা। গত বছর এই প্যাকেজের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
লিখিত বক্তব্যে হাব মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, সৌদি পর্বের চূড়ান্ত ব্যয়ের হিসাব না পাওয়ায় বিগত বছরের ব্যয়ের ধারাবাহিকতায় সম্ভাব্য খরচ হিসাব করে হজ প্যাকেজ প্রণয়ন করা হল। পরবর্তীতে রাজকীয় সৌদি সরকার কর্তৃক কোনো খাতে খরচ বৃদ্ধি বা হ্রাস করা হলে প্রযোজ্য খাতের বর্ধিত বা হ্রাসকৃত ব্যয় প্যাকেজ মূল্য হিসেবে গণ্য হবে এবং হজযাত্রীকে তা পরিশোধ করতে হবে এবং একই সাথে বিমান ভাড়া হ্রাস পেলে তা প্যাকেজ মূল্যের সাথে সমন্বয় করা হবে। এ বছর কুরবানির অর্থ নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে পরিশোধ বাধ্যতামূলক হওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমের প্যাকেজে কুরবানির অর্থ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর হজযাত্রীর বিমান ভাড়া বাংলাদেশ অংশের ট্যাক্স ও চার্জ ব্যতীত ধরা হয়েছে।
প্রতি সৌদি রিয়াল ৩২ টাকা ৮৫ পয়সা ধরে প্যাকেজের খরচ হিসাব করা হয়েছে জানিয়ে হাব মহাসচিব ফরিদ আহমেদ বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনা হজযাত্রীদের খাবার খরচ প্যাকেজের বহির্ভূত থাকলেও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উন্নত সার্ভিসের জন্য খাবারের মূল্য প্রতিটি প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এর আগে রোববার সচিবালয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন সরকারি ব্যবস্থাপনার হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছর প্যাকেজ–১ এর মাধ্যমে হজ পালনে খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা। এছাড়া হজ প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা এবং হজ প্যাকেজ-৩ এ ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ধর্ম উপদেষ্টা বলেছিলেন, বেসরকারি মাধ্যমে একটি প্যাকেজের ব্যয় হতে হবে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৫ টাকা। এর বাইরে আরও দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবেন এজেন্সি মালিকরা। সেই অনুযায়ী সাশ্রয়ী প্যাকেজের খরচ ঠিক করেছে হাব।
বর্তমানে হজে যেতে হলে প্রথম ধাপে ৩০ হাজার টাকা ফি পরিশোধ করে প্রাক নিবন্ধন করতে হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে সারতে হয় প্রাথমিক নিবন্ধন। আর হজের প্যাকেজ ঘোষণার পর বাকি টাকা পরিশোধ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করা যায়। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৬ মে হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এ বছর হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে ২৭ জুলাই থেকে, যা চলবে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত।
বেসরকারি মাধ্যম সরকারি মাধ্যম
সাশ্রয়ী প্যাকেজ ৫,১০,০০০ টাকা প্যাকেজ-৩ ৪,৬৭,১৬৭ টাকা সাধারণ প্যাকেজ ৫,৫০,০০০ টাকা প্যাকেজ-২ ৫,৫৮,৮৮১ টাকা বিশেষ প্যাকেজ ৭,৫০,০০০ টাকা প্যাকেজ-১ ৬,৯০,৫৯৭ টাকা
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ বছর শতভাগ হজযাত্রীর (সিলেট ও চট্টগ্রাম বাদে) সৌদি অংশের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশেই সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ‘মক্কা-রুট-সার্ভিস-ইনিশিয়েটিভ’ এর আওতায় হজযাত্রীদের প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন বাংলাদেশেই সম্পন্ন করার জন্য ডেডিকেটেড হজ ফ্লাইট হওয়া বাধ্যতামূলক। হজযাত্রী পরিবহনে ডেডিকেটেড ফ্লাইটের হিসাব করেই সর্বোচ্চ মূল্যে বিমান ভাড়া ঠিক করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ডেডিকেটেড ফ্লাইটের ভাড়া নিলেও এয়ারলাইন্সগুলো শিডিউল ফ্লাইটেও হজযাত্রী পরিবহন করেছে। এবার যেহেতু ডেডিকেটেড ফ্লাইটের ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছে, তাই হজযাত্রীদের সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন ঢাকায় নিশ্চিত করার জন্য সব হজ ফ্লাইট ডেডিকেটেড হতে হবে। কোনোভাবেই কোনো শিডিউল ফ্লাইটে হজযাত্রী পরিবহন করা যাবে না।