কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দল আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং অনলাইন বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন বলে সরকারি বৈঠকে জানানো হয়েছে। রাজধানীতে গত বুধবার আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ২৪৪ জনের মধ্যে দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে টেলিগ্রাম ও বোটিম অ্যাপ ব্যবহার করতে দেখা গেছে। বুধবার গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মুঠোফোন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও সভায় যোগ দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে আলোচনা হয়, আপাতত রাতে দুটি অ্যাপের ব্যবহার সীমিত করা যায় কি না এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর টেলিগ্রাম ও বোটিম বাংলাদেশে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। টেলিগ্রাম একটি জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ, যার প্রতিষ্ঠাতা রুশ বংশোদ্ভূত পাভেল দুরভ। অন্যদিকে বোটিম ব্যবহার করা হয় কথা বলা, ভিডিও কল এবং অর্থ লেনদেনের জন্য। এর প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে।
বৈঠকে জানানো হয়, সারা দেশে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সক্রিয় করা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তফসিল ঘোষণার পর এসব যোগাযোগের মাধ্যমে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে পারেন। এ কারণে অ্যাপ দুটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তারের পর দ্রুত সময়ে কীভাবে জামিন পাচ্ছেন, তা নিয়ে কোর কমিটির সভায় আলোচনা হয়। সূত্র জানিয়েছে, সভায় অংশ নেওয়া দুজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে তাঁদের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), জেলা আইনজীবী সমিতি ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করছেন। পরে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে, তাঁদের জামিনের বিষয়টি আরও সতর্কতার সঙ্গে দেখা হবে। একই সঙ্গে সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সতর্ক করা হবে, যাতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জামিনের দিকটি গুরুত্বসহকারে দেখা যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৩ মাসে ‘ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত’ অভিযোগে ৪৪ হাজার ৪৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ—অর্থাৎ ৩২ হাজার ৩৭১ জন জামিন পেয়েছেন। বৈঠকে বলা হয়, স্থানীয় পর্যায়ে অনেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), আইনজীবী সমিতি ও রাজনৈতিক নেতারা জামিন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখছেন। সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জামিনের বিষয়টি আরও কঠোরভাবে দেখা হবে এবং জেলা প্রশাসকদের সতর্ক করা হবে।