ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ | ৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

বিবিসির নিবন্ধ

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতায় ইউরোপের স্বীকৃতি নিষ্ফল, চাবিকাঠি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতায় ইউরোপের স্বীকৃতি নিষ্ফল, চাবিকাঠি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে

জাতিসংঘের মঞ্চে ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতা রাষ্ট্র হিসেবে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের স্বীকৃতি শতবর্ষী ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব মুহূর্ত। তবে এটি এক ধরনের কূটনৈতিক ঝুঁকিও। কারণ, বড় ইউরোপীয় শক্তিগুলো মনে করছে—সংঘাত এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাদের এমন নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। ইউরোপীয় নেতারা বিশ্বাস করেন, বহু বছর ধরে আলোচিত এই আন্তর্জাতিক ফর্মুলাই দুই দেশের সমাজের জন্য ন্যায়সংগত ভবিষ্যতের একমাত্র পথ। 

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিউইয়র্কে এক সম্মেলনে বলেছেন, যদি এই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান কার্যকর না হয়, তাহলে এর বিকল্প হবে তথাকথিত ‘এক রাষ্ট্র সমাধান’। আর এর অর্থ হবে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আধিপত্য ও নিপীড়ন। কোনো অবস্থাতেই ফিলিস্তিনিদের গণহারে শাস্তি দেওয়া, অনাহার কিংবা জাতিগত নির্মূলকে ন্যায়সংগত বলা যায় না।

এতে ক্ষুব্ধ ইসরায়েল পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিচ্ছে। দেশটির মতে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া আসলে হামাসকে পুরস্কৃত করার শামিল। বিশেষ করে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ইসরায়েলে হামলার পর এবং হামাসের জিম্মি ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার পর এটি আরও বেশি করে প্রতিভাত হচ্ছে। এমনকি গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের মঞ্চেও একই কথা উচ্চারণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও।

কিছু ইসরায়েলি মন্ত্রী চান—ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে পশ্চিমাদের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিম তীরের কিছু অংশ নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হোক। এতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা চিরতরে শেষ হয়ে যাবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে চরম দক্ষিণপন্থী রাজনীতিকরা আছেন। তাঁদের ঘোষিত নীতি হলো ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে সেখানে ইহুদি বসতি গড়ে তোলা। তারা চাইছে দুই রাষ্ট্র সমাধানের সব দরজা বন্ধ করে দিতে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আগের মতোই ইসরায়েলকে সমর্থন করছে। তারা ইউরোপীয়দের পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে শাস্তি দিচ্ছে। এমনকি তাঁকে নিউইয়র্ক সম্মেলনে উপস্থিতও হতে দেওয়া হয়নি ভিসা বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে। তিনি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বক্তব্য দেন।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিন সম্মেলন ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধান নিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে গভীর বিভাজনকে সামনে এনেছে। কিন্তু ইউরোপীয়রা বলছেন, মাঠের বাস্তবতা তাঁদের সামনে আর কোনো বিকল্প রাখেনি।

প্রথমে গাজায় যুদ্ধের কার্যকর সমাপ্তি, তারপর দীর্ঘ মেয়াদে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান—ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র। ইউরোপীয় দেশগুলোর দাবি, ইসরায়েলের কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এতে কেবল বেসামরিক মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে, জিম্মিদের জীবন আরও ঝুঁকিতে পড়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সৌদি আরব নেতৃত্ব দিয়েছে জাতিসংঘ সম্মেলনে এবং আরব লীগও সমর্থন জানিয়েছে। ফ্রান্স বলছে, এভাবে তারা হামাসের ওপর চাপ তৈরি করতে পারবে। কারণ, সম্মেলনে অংশ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ আরব দেশগুলো এখন হামাসকে নিরস্ত্র হতে বলেছে, অস্ত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে বলেছে। একই সঙ্গে তারা স্পষ্ট করেছে, ফিলিস্তিনি নেতৃত্বে হামাসের আর কোনো ভূমিকা থাকতে পারবে না। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন বাস্তবে সম্ভব তখনই, যখন বর্তমানের সুপারপাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু এখনো অন্য পরিকল্পনায় আছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ।