ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ | ৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

বাগরাম ঘাঁটি দখলের চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে

বাগরাম ঘাঁটি দখলের চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে

আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত চায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করেন, কিছু কারণে ঘাঁটিটি নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যতম কারণ হলো― চীনকে নজরদারিতে রাখা। তবে জোর করে বাগরাম ঘাঁটি দখলে চেষ্টা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।  

বাগরাম বিশ্বের বৃহত্তম বিমানঘাঁটিগুলোর মধ্যে একটি, যার ভারী কংক্রিট এবং ইস্পাত দিয়ে নির্মিত বৃহত্তম রানওয়ে রয়েছে। ১১ হাজার ৮০০ ফুটের এই রানওয়ে বোমারু বিমান এবং বড় কার্গো বিমান চলাচলের জন্য আর্দশিক। ২০২১ সালে আশরাফ ঘানির সরকারের পতন ও মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর বাগরাম ঘাঁটি দখল নেয় তালেবান। ওই সময় সেখানো থাকা বিপুল পরিমাণে অস্ত্র-গোলাবারুদ, বিমান ও হেলিকপ্টার রেখেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় মার্কিন সেনারা। তবে ফেলে যাওয়া বিমান ও হেলিকপ্টারের কোনো কোনোটি নষ্ট করে রেখে যায় তারা।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, এ ঘাঁটিতে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছ যুক্তরাষ্ট্র। তাই এটি তাদের ফেরত দিতে হবে। যদি আফগানিস্তান এ ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে না দেয় তাহলে ‘খারাপ কিছু হবে’। অন্যদিকে গত রোববার এক বিবৃতিতে আফগান তালেবান সরকার জানায়, কোনোভাবেই মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তানে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে না। যদিও বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাই। কিন্তু বাগরাম ঘাঁটি নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না।

বাগরাম ঘাঁটি দখলের ট্রাম্পের ইচ্ছাকে অযৌক্তিকে উল্লেখ করেছেন উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।  মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফরেন পলিসিতে এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘ট্রাম্প যে বারবার বাগরাম ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন। তার এ চাওয়াটি বাস্তব। তিনি কোনো ভনিতা করছেন না। তার চাপের কারণে এমন হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র এ ঘাঁটি দখল করে নিতে পারে অথবা এটি ধ্বংস করে দিতে পারে- দুই পরিস্থিতিই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যা মার্কিন ও আফগান উভয়ের মধ্যে ব্যাপক হতাহতের ঝুঁকি তৈরি করবে। একই সঙ্গে বন্দি বিনিময় আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, রাজধানী কাবুলের উত্তর দিকে অবস্থিত বাগরাম ঘাঁটির গুরুত্ব নতুন কিছু নয়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালায় ওয়াশিংটন। ওই সময়ই আফগানিস্তানের প্রধান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয় কাবুলের উপকণ্ঠে অবস্থিত বাগরাম বিমানঘাঁটি। প্রায় দুই দশক ধরে এটি ছিল মার্কিন বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। এছাড়াও বিমানঘাঁটিতে একটি কুখ্যাত কারাগার ছিল। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘সন্ত্রাসীবিরোধী যুদ্ধ’ চলাকালীন হাজার হাজার মানুষকে ধরে এনে কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই বছরের পর বছর আটকে রেখেছিল মার্কিন সেনারা। যাদের অনেকের ওপর অমানবিক নির্যাতনও চালানো হতো।