সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ স্পষ্ট জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন না হলে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনো প্রক্রিয়া চলতে পারে না। কূটনৈতিক ফায়দার জন্য রিয়াদ ফিলিস্তিন ইস্যু থেকে সরে যাবে না।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। চলতি বছরের শুরুর দিকেই সৌদি আরব জানিয়েছিল, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গেই স্বীকৃতি ও সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের শর্ত বাঁধা। গাজায় ইসরায়েলের হামলা চলতে থাকায় কো ধরনের স্বাভাবিকীকরণ আলোচনাও সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানায় রিয়াদ।
ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট খুব ভালোভাবেই বোঝেন, পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার ঝুঁকি আর বিপদ কতটা গুরুতর। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ওয়াশিংটন এ ধরনের পদক্ষেপে সহিংস উচ্ছেদের ঝুঁকি এড়াতে পারবে না। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র শিগগিরই প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যা হবে টেকসই এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফিলিস্তিন ইসরায়েলের সঙ্গে মূল সমস্যাগুলো বাস্তবভিত্তিকভাবে সমাধানের জন্য প্রস্তুত।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন আবারও দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রচারণা জোর পাচ্ছে। বহুদিন ধরেই এই সমাধানকে ইসরায়েলের দখলদারি নীতি আড়াল করার কৌশল হিসেবে দেখা হয়। এরই মধ্যে ফ্রান্স ও ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে রিয়াদ প্রায় ১০০ দেশকে একটি রোডম্যাপের পক্ষে দাঁড় করিয়েছে। ওই পরিকল্পনায় গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি তোলা হয়েছে, ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি চাওয়া হয়েছে। তবে একই সঙ্গে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের শর্ত রাখা হয়েছে, যা অনেকের কাছে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার সমান মনে হচ্ছে। এতে ইসরায়েলের দমনকাঠামো অক্ষত থেকে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সৌদি কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, এসব পদক্ষেপ শুধু দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকেই শেষ করে দেবে না, বরং পুরো অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তুলবে। ওয়াশিংটনের জন্য ইসরায়েলের দখলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে অতীত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে আন্তর্জাতিক আইন রক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে, আরব বিশ্বে আস্থা কমবে এবং আঞ্চলিক কূটনৈতিক লক্ষ্য ভেস্তে যাবে। সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলো জানিয়ে দিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের ন্যায়বিচার ছাড়া কোনো স্বাভাবিকীকরণ চুক্তিকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় করা অন্যান্য চুক্তিও ভেঙে পড়তে পারে এবং নতুন করে সংঘাত উসকে উঠতে পারে।
সম্প্রতি কাতারে হামলার ঘটনায়ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে। মার্কিন মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির আলোচনার সময় ইসরায়েল হামাসের আলোচকদের টার্গেট করে হামলা চালায়। এতে স্পষ্ট হয়েছে, ওয়াশিংটন তার মিত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয় বা করতে চায় না। আরব দেশগুলোর কাছে ঘটনাটি এই বার্তাই দিয়েছে—আমেরিকার সঙ্গে অংশীদারত্ব এখন আর আঞ্চলিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে।