শেরপুর শহরের কালীর বাজারে মা ভবতারা কালীমন্দির চত্বরে এবার নজর কাড়ছে ব্যতিক্রমী এক দুর্গামণ্ডপ। মহালয়ার পর থেকেই দর্শনার্থীরা মণ্ডপটি দেখতে ভিড় করেন। আজ রোববার শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোপূজা।
মণ্ডপের প্রবেশপথ সাজানো হয়েছে পাখির পালকের মোটিফে। নারকেলের ছোবড়া দিয়ে বাবুই পাখির বাসার আদলে তৈরি মণ্ডপে বসানো হয়েছে দুর্গা প্রতিমা। তিন পাশে কার্টন ও কাঠের গুড়া দিয়ে সাজানো হয়েছে শত শত পাখির বাসা। তুলা ও কাগজে তৈরি পাখিদের ঝাঁক যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে কিচিরমিচির মধুর শব্দ।
পরিবেশ, প্রকৃতি আর পাখি সংরক্ষণের বার্তা ছড়িয়ে দিতে স্থানীয় মার্চেন্ট ক্লাব সাজিয়েছে এই পূজামণ্ডপটি। মার্চেন্ট ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, অর্ধশতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি এবার দুর্গোৎসব উদ্যাপন করছে পরিত্যক্ত বাক্স, কার্টন কাগজ, নারকেলের ছোবড়া, পাট ও কাঠের গুড়া দিয়ে তৈরি প্রতিমা আর সাজসজ্জায়। প্রতিবছরই ভিন্ন ভিন্ন থিমে দুর্গাপূজা আয়োজন করে মার্চেন্ট ক্লাব। এবার ৫১ বছরে পদার্পণ করল তাদের দুর্গাপূজা।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, এবারের থিম ‘পাখি সংরক্ষণ মানে প্রকৃতি সংরক্ষণ’। গৌড় মালাকার ও নিতাই মালাকার নামের প্রতিমা কারিগর দুই ভাই মার্চেন্ট ক্লাবের এ ব্যতিক্রমী দুর্গা মণ্ডপটি তৈরি করেছেন। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবারের মণ্ডপ পাখি সুরক্ষা, পাখির আবাসস্থল সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়কে সামনে রেখে সাজানো হয়েছে।
প্রতিমাশিল্পী তরুণ নিতাই মালাকার বলেন, প্রকৃতি হলো আমাদের মা। মা-ই তো দেবী। তাই এবারের থিম করেছি পাখি সংরক্ষণ। মানে প্রকৃতি সংরক্ষণ। বন বাঁচাও, পাখি রক্ষা করো—এমন বার্তাই আমরা দিতে চেয়েছি। তিন সপ্তাহ ধরে তৈরি করা এ মণ্ডপে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। সবকিছুই সাজানো হয়েছে পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে।
মার্চেন্ট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক টুকন সাহা বলেন, মন্দিরের দুটি গাছে সারা বছর পাখির কলরব থাকে। পাখির আবাসস্থল ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে। তাই এবারের পূজায় তাঁরা সচেতনতার বার্তা দিতে চেয়েছেন। তাঁদের ক্লাব বরাবরই ব্যতিক্রমী থিম নিয়ে পূজার আয়োজন করে থাকে।
মার্চেন্ট ক্লাবের সভাপতি বিপ্লব সরকার বলেন, পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। নগর সভ্যতার কারণে পাখির আবাসস্থল আমরা নিজেরাই নষ্ট করে ফেলেছি। পাখির আবাসস্থল রক্ষার জন্য আমার-আপনার সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই পাখি, পাখির আবাসস্থলকে এবং প্রকৃতিকে রক্ষা করার থিম দিয়ে আমরা এবার আমাদের পূজা মণ্ডপ সাজিয়েছি। যেন ধর্মীয় পূণ্যকর্মের সঙ্গে সঙ্গে সবাই পাখি, প্রকৃতি, পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন হয়।