ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ঢাকা মহানগরীতে ৮৯টি পূজামণ্ডপকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে আমাদের যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে। কেউ কোন দুষ্টুমি করার সুযোগ পাবে না। দুষ্টুমি করলে আমরা সম্মিলতভাবে সেটা মোকাবিলা করব এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। সবসময় দুষ্কৃতকারী থাকে, সব সমাজে, সব দেশেই থাকে। তাদের হাত থেকে আমাদের উৎসব যাতে সুরক্ষিত হয়, তারা যেন কোনোরকম কুমতলব বাস্তবায়ন করতে না পারে। তারজন্য আমাদের যেরকম সজাগ থাকতে হবে। একইসাথে পূজা উদযাপন কমিটিকে ‘সজাগ থাকার’ অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গাপূজায় নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ডাকসু নির্বাচন সফলভাবে শেষ করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনারা দেখছেন রিসেন্টলি আমরা খুব ভাল কাজ করছি। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কত কথা শোনা গেল। আমরা রাতভর, দিনভর কাজ করে সুন্দরভাবে সফল করেছি। আমি আশা করি আমার অফিসাররা পূজার দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করবে এবং কোন অসুবিধা হবে না। এ বছর ‘অত্যন্ত উৎসবমুখর ও জাঁকজমক পরিবেশে’ পূজা উদযাপিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে পূজার আনুষ্ঠানিকতা আরম্ভ হয়েছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেছেন, ভক্তদের উপস্থিতি অবস্থান ও গুরুত্ব বিবেচনায় পূজা উদযাপন পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে পূজা মণ্ডপগুলোকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে ২৪ ঘণ্টা পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। শ্রেণি অনুযায়ী প্রত্যেকটি মণ্ডপে পুলিশ ও আনসার মিলিয়ে ন্যুনতম ১১ থেকে ৫০ জন পর্যন্ত নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন আছে। স্ব-স্ব এলাকায় নিরাপত্তা টহল, চেকপোস্টের বাইরে পূজামণ্ডপ কেন্দ্রীক প্রায় ২২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। যারা পরিচালনা কমিটির সাথে যোগাযোগ রেখে মণ্ডপের ‘সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করবে।
মণ্ডপে ভক্তদের যাতায়াত ও যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য পৃথক ট্রাফিক পরিকল্পনা ও প্রতিমা বিষর্জনের দিন পৃথক ব্যবস্থা নেওয়ার তথ্য দেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, বিসর্জন শোভাযাত্রা নিরাপদ করতে অতিরিক্ত আরো প্রায় ২৪০০ পুলিশ মোতায়েণ থাকবে। এ উপলক্ষে পলাশীর মোড়, রায়সাহেব বাজার ও ওয়াইসঘাটে তিনটি অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হবে। পূজা চলাকালীন সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও মোতায়েন থাকবে। এছাড়া যেকোন ধরণের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সোয়াট, এক্সপ্লোসিভ রিকভারি ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম, ডগ স্কোয়াড ও ক্রাইম সিন টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন থাকবেন। পূজা মণ্ডপের প্রবেশপথে কোনটিতে আর্চওয়ে স্থাপন করা হবে। প্রয়োজনে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হবে। এছাড়া সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মণ্ডপের আশেপাশে পুলিশি নজরদারি থাকবে। এছাড়া যে কোন ধরণের অপতথ্য ছড়ানো রোধে সাইবার পেট্রোলিং জোরদার এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সার্বক্ষণিক সমন্বয় থাকবে।
আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ভক্তবৃন্দ চলে যাওয়ার পর মণ্ডপ যেন কোনোভাবেই অরক্ষিত না থাকে। সেজন্য রাতের বেলা কমপক্ষে দুইজন স্বেচ্ছাসেবক পূজা মণ্ডপে উপস্থিত থাকবেন। আমার পুলিশ আনসার, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের লোক থাকবে। কিন্তু সাথে অবশ্যই আপনাদের দুইজন লোক থাকবে। মণ্ডপে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সুবিধার্থে এবারই প্রথমবার তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পূজা মণ্ডপ ভিজিট করবেন। থানা ফাঁড়ির লোক সবাই পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাব।
গতবছর পট পরির্তনের পর যে পরিবেশ ছিল, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনোবল এত ভালো ছিল না। নানা ধরনের জটিলতা ছিল। এবার সেই পরিস্থিতি নেই। এবার আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন বিশেষ করে ডিএমপি সদস্যরা সুসংগঠিত হয়ে গেছে, পূর্বের ন্যয় আমরা কাজ করতেছি। আমি আশা করি নিরপত্তাজনিত কোনরকম কোন সমস্যা হবে না।
এদিন ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। এবারে ঢাকাতে গতবারের তুলনায় ৭টি বেড়ে মোট ২৫৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর সারাদেশে মোট মণ্ডপের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩৫৫টি, যা গতবারের তুলনায় প্রায় হাজারখানেক বেশি। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১ লাখ সশস্ত্রবাহিনী সদস্যর পাশাপাশি ৪৩০টি প্লাটুন বিজিবি, ৭০হাজার পুলিশ, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও পর্যাপ্ত সংখ্যক আনসার সদস্য মোতায়েন থাকছে।