বাংলাদেশী আলোকচিত্র শিল্পী ও লেখক শহিদুল আলমকে ইসরায়েলি বাহিনীর আটক করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। বুধবার (৮ অক্টোবর) পৃথক পৃথক বিবৃতিতে ইসলামপন্থি এই দলগুলো এ আহবান জানায়।
জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার উদ্দেশে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা’র জাহাজ কনশানসসহ একাধিক নৌযান বুধবার (৮ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক পানিসীমায় আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী। এসময় তারা ৯৩ জন সাংবাদিক, চিকিৎসক ও মানবাধিকারকর্মীকে আটক করে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলমও রয়েছেন। এই নৌযানগুলো গাজাবাসীর জন্য খাদ্য, পানি ও ওষুধসহ জরুরি মানবিক সহায়তা বহন করছিল। ইসরাইলের এই অমানবিক ও আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং নিন্দা জানাচ্ছি। ক্ষুধার্ত ও অবরুদ্ধ গাজাবাসীর প্রাণরক্ষায় ত্রাণবাহী জাহাজগুলো যাতে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে, সে জন্য ইসরাইলের ওপর অবিলম্বে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। একইসাথে আটক বাংলাদেশী আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ সকল মানবাধিকার কর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আমি বিশ্ববাসীর প্রতি এ বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, আলোকচিত্র শহিদুল আলমকে ইজরাইলী বর্বর হানাদাররা ধরে নিয়ে গেছে। এটা আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত, আমাদের নাগরিকদের মর্যাদা ও সন্মানের প্রশ্ন। তাই শহিদুল হকের নিরাপত্তা ও মুক্তির ব্যাপারে সরকারকে জরুরী ও সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে হবে। শহিদুল আলম ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার প্রতিকরুপে হাজির হয়েছেন। তিনি গাজার জনগণের প্রতি আমাদের সম্মিলিত ভালোবাসা বহন করেছেন। ফলে তার নিরাপত্তা ও মুক্তি আমাদের জাতীয় সন্মান ও মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে দেশের সন্মান ও মর্যাদার প্রশ্নে যা করার তাই করতে হবে। সরকারকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, জনতা আপনাদের সাথে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
অপরদিকে এক যৌথ বিবৃতিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেছেন, খ্যাতনামা আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে ইসরায়েলি বাহিনী অন্যায়ভাবে অপহরণ করেছে। এটি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও সরাসরি আঘাত।শহিদুল আলম কোনো রাজনৈতিক চরিত্র নন, বরং একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও মানবতার কণ্ঠস্বর। গাজার নির্যাতিত মুসলমানদের পক্ষে দাঁড়ানো কোনো অপরাধ নয় বরং এটি একজন বিবেকবান মানুষের ন্যায়িক কর্তব্য।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন,বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আমাদের জোর আহ্বান, যেন অবিলম্বে শহিদুল আলমের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। গাজায় মুসলিম জনগণের ওপর চলমান অমানবিক অবরোধ, খাদ্য সংকট এবং প্রাণনাশের ঘটনাগুলো বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো। এই মুহূর্তে গাজার শিশু, নারী ও নিরীহ জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা, জীবন রক্ষা এবং সম্মান বজায় রাখার দায়িত্ব শুধুমাত্র মুসলিম উম্মাহর নয়, বরং সকল মানবতাবাদী মানুষের। গাজার ওপর চলমান গণহত্যা বন্ধে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এবং সেখানে টেকসই শান্তি ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান তারা।
যৌথ বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা’র জাহাজ ‘কনসেন্স’ থেকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলমকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক করা একটি জঘন্য মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর নগ্ন আঘাত। শহিদুল আলম একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আলোকচিত্রী, যিনি সত্য, ন্যায় ও মানবতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গাজার অবরুদ্ধ জনগণের পাশে দাঁড়াতে তিনি শান্তিপূর্ণ মানবিক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। এমন এক ন্যায়সংগত ও মানবিক উদ্যোগে যুক্ত থাকার কারণে তাকে আটক করা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ইসরায়েলি আগ্রাসন ও বর্বরতার আরও একটি জঘন্য দৃষ্টান্ত।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবিলম্বে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে শহিদুল আলমের মুক্তি ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবে—এটি জাতির প্রত্যাশা। একইসাথে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, সাংবাদিক সংগঠন ও মুসলিম দেশসমূহকে আহ্বান জানানো হয় যেন তারা এই অবৈধ আটক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে। গাজার নারী, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ ও অবরোধ মানবতার ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়। খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানিবিহীন করে লাখো মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে রাখা এক নির্মম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। এখনই বিশ্বের মুসলমান, মানবাধিকারকর্মী ও শান্তিকামী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধে। গাজার মজলুমদের পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। শহিদুল আলম সেই দায়িত্ব পালনের সাহসী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাকে আটক করা মানে মানবতার কণ্ঠ রুদ্ধ করা।