আদিম যুগ থেকেই পুরুষের গালে দাড়ি ছিল প্রাকৃতিক নিয়মে। মানব সভ্যতার উত্তরণেও পুরুষের গালে দাড়ি শোভা পেয়েছে কালে কালে। সভ্য মনুষ্য জাতির ক্রমবিকাশে মানুষের মুখের দাড়ি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও ভালো’র স্বীকৃতি পেয়েছে। যা এখনো অটুট।
বিশ্বের প্রায় সব ধর্ম প্রচারকারী থেকে শুরু করে অনেক গবেষক বা বিজ্ঞানীরাও দাড়ি রাখতেন। লেখকদের মাঝেও অনেকের গালে দাড়ি ছিল। যা সাধারণ মানুষের মাঝে শ্রদ্ধা জাগাতো।
এই বাংলায় লালন ফকির বা রবীন্দ্রনাথের দাড়ি অনেকাংশে উদ্ভুদ্ধ করেছে অন্য লেখকের দাড়ি রাখায়। তার উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে আছেন, বাংলাদেশের জনপ্রিয় কবি নিরমলেন্দু গুণ কিংবা অসীম সাহা। উনারা ছাড়াও আরো অনেক লেখক এই দেশে আছেন- যারা দাড়ি রাখতে পছন্দ করেন।
পৃথিবীজুড়ে বিপ্লবীদের গালেও দাড়ি শোভা পেয়েছে সব কালে। যা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেও পরিলক্ষিত হয় অনেকাংশে। আবার ওই সময় দাড়ি রাখা `শান্তি নিকেতনী ফ্যশন' হিসেবেও ধরা দেয় অনেকের মাঝে।
বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে বিটিভি’র নাটকের মাধ্যমে যারা দাড়ি’র ফ্যশনকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যান তাদের মাঝে নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের ও আসাদুজ্জামান নূর অন্যতম। হুমায়ুন আহমেদের `কোথায় কেউ নেই' নাটকে `বাকের ভাই' চরিত্র রুপদানকারী অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের দাড়ি এখনো এখনো আকর্ষণীয়। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের সাংসদ। তবুও অভিনেতা হিসেবে তার জনপ্রিয়তা ক্ষয়িষ্ণু নয়। অভিনেতা কিংবা নেতা- সব ক্ষেত্রেই দাড়িতেই ব্যাক্তিত্ববান আসাদুজ্জামান নূর। অভিনেতা শঙ্কর সাঁওজালও গাল ভর্তি দাড়ি নিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান বিটিভিতে প্রচারিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাটক `মৃত্যুক্ষুধা' তে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে।
দীর্ঘ কয়েক বছর পরে টিভি জগতে পরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী ও অমিতাভ রেজা’র দাড়ি জনপ্রিয়তা পায় তাদের ভক্তদের মাঝে। বর্তমানে তারা বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। নির্মাতা ও অভিনেতা গাজী রাকায়েতকেও এখন দাড়িতে খুব সুন্দর দেখায়। এদিকে দহন ও পোড়ামন-২ চলচ্চিত্রের সাফল্যের কারণে চিত্রনায়ক সিয়ামের দাড়িরও অনেক ভক্ত হয়েছেন অনেক মেয়ে।
হলিউড বা বলিউডের তারকাদের মাঝে দাড়ি’র ট্রেন্ড অনেক দিনের পুরানো। এখনো তাদের দাড়ির ফ্যশন ম্রিয়মাণ নয়। বরং, কালের চক্করে দাড়ির ফ্যাশন নিত্য নতুন ভাবে উপস্থাপন করেছেন তারা।
বলিউড তারকাদের কল্যাণে এই দেশের তরুণদের মাঝেও দাড়ি’র ফ্যশন এখন বেশ জনপ্রিয়। ছেলেদের এই দাড়িও যেন দিনকে দিন বেশ সমাদর পাচ্ছে তাদের প্রিয়তামার কাছে। অন্য মেয়েদের কাছে তো বটেই। তাই এখনকার ফ্যশন প্রিয় ছেলেরা ঝুঁকছে দাড়ি’র স্টাইলে। ঝোঁক বুঝে ভালো ব্যাবসাও করে যাচ্ছে ছেলেদের সেলুন কিংবা পার্লারগুলো। এসব জায়গায় এই দাড়ি কাটছাঁট করার নানান নামও রয়েছে। যেমন- সাইড সুইপ, ব্যাক ব্রাশ উইথ সাইড শেইপ, সামার বাউন্স ডিসকানেক্টেড, লং অন টেপ ইত্যাদি। এসব ডিজাইনে শুধু দাড়ি কাটলেই হবে না, দু-তিন অন্তর অন্তর এর ছাঁটও দিতে হবে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে। নইলে যে তারুণ্যের `হিরো ইজম' প্রকাশ পাবে না সঠিকভাবে। তাই বোধ হয়, ইদানিং দেশীয় টিভি পর্দা জুড়ে শেভিং ব্লেটের বিজ্ঞাপনও কমে গেছে।
ফ্যশন আসলে ফিনিক্স পাখির মতন। অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষের মাঝে ফ্যশন এভাবেই ঘুরে ফিরে এসেছে নিত্য নতুন নাম ধারণ করে। যার আসল মাজেজা একই। তাই হয়তো কালের পরিক্রমায় এখন মেয়েদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ধরা দিচ্ছে ছেলেদের দাড়ির নানান স্টাইল।
যুগে যুগে বেশীরভাগ ছেলেরা চেস্টা করেছে মেয়েদের মন যুগিয়ে চলতে। ব্যাতিক্রম নয় এ প্রজন্মের ছেলেরাও। মেয়েদের কাছে ক্রেজ কে না হতে চায় ! তাই তো এখন তারুণ্যের ফ্যাশনে চলছে দাড়ি’র ফ্যশনের রমরমা জয়যাত্রা।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, গ্লোবাল টিভি