মাত্র ৪ বছর বয়সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিজের দুহাত হারান চীনের লি শিয়াংইয়াং। তবে ওই দুর্ঘটনা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে মাত্র আট বছর বয়সে পায়ে তুলে নেন রংতুলি। আঁকতে শুরু করেন ক্যালিগ্রাফি। সেগুলো বিক্রি করে পাওয়া অর্থ তুলে দেন পরিবারের হাতে।
এখন লির বয়স ৩০ বছর। থাকেন চীনের হুনান প্রদেশে। বিয়ে করেছেন, আছে দুই সন্তান। চলতি বছরের জুলাই থেকে তার দুই সন্তান স্কুলে যাচ্ছে। এতে পরিবারের খরচ বেড়েছে। বাড়তি অর্থ আয় করতে এখন ক্যালিগ্রাফির পাশাপাশি ফুড ডেলিভারির কাজ শুরু করেছেন লি। শহরের একটি পর্যটনকেন্দ্রের কাছে তার একটি ছোট্ট দোকান আছে।
দুই হাত না থাকায় লির জন্য কাজটা মোটেই সহজ নয়। তিনি একটি এক চাকার সাইকেলে চেপে শহরময় ঘুরে বেড়ান। পিঠে ঝোলানো বড় ব্যাগে থাকে খাবার। তিনি সাইকেলে চেপে গ্রাহকদের দরজায় যান।
স্থানীয় একটি গণমাধ্যমকে লি বলেন, আমার যা হয়েছে, সেটা বদলানোর ক্ষমতা আমার হাতে নেই। আমি কেবল সামনে এগিয়ে যেতে পারি। এটা নিয়ে ভেঙে পড়ার বা অভিযোগ করার কিছু নেই। ফুড ডেলিভারির কাজ করতে এসে তিনি অসংখ্য দয়ালু ও ভালো মানুষের দেখা পেয়েছেন। দোকানমালিক ও ক্রেতাদের বেশির ভাগই তাঁর সঙ্গে ভালো আচরণ করেন এবং কেউ কেউ তাকে টিপসও দেন।
প্রথম মাসে ফুড ডেলিভারি করে তিনি যা আয় করেছিলেন, তার পুরোটাই তিনি দান করেছেন। লি বলেন, ‘আমি অন্যদের কাছ থেকে অনেক সহায়তা পেয়েছি। আমি এখন সেই ভালো ব্যবহার অন্যদের ফেরত দিতে চাই।’
স্থানীয় এক দোকানি লিকে বিনা মূল্যে পানি ও খাবার দেন। এছাড়া অন্যান্য ফুড ডেলিভারি রাইডাররা তাকে এ কাজে নানা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন। লি প্রথম মাসে গ্রাহকদের কাছে প্রায় ২০০ অর্ডার পৌঁছে দিয়েছেন। দিনে দিনে এ কাজে আরও দক্ষ হয়েছেন তিনি। এখন তিনি দিনে প্রায় ৪০টি অর্ডার ডেলিভারি করতে পারেন।
যদিও এখনো লির মূল আয়ের উৎস তার আঁকা ক্যালিগ্রাফি এবং সেগুলো বিক্রি থেকে পাওয়া আয়। লির মাসিক আয় এখন কত, তা তিনি প্রকাশ করেননি। তবে সরকার থেকে তাকে বিনা খরচে থাকার জন্য বাড়ি এবং একটি দোকান দেওয়া হয়েছে। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লির জীবনযুদ্ধের এই গল্প প্রকাশ পাওয়ার পর তা অনেক মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।