ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৫ আশ্বিন ১৪৩২ | ৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

মুর্শিদ কুলী খাঁর অভ্যুদয় : ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ

মুর্শিদ কুলী খাঁর অভ্যুদয় : ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ

গ্লোবাল টিভি ছবি

শহিদুল ইসলাম ফারুক : বাংলার প্রথম স্বাধীন নবাব মুর্শীদ কুলী খাঁ ব্রাহ্মণের পুত্র ছিলেন। ইসফাহান নগরবাসী হাজী শফী তাকে দাসরূপে ক্রয় করে মুহম্মদ হাজী নাম দিয়ে পুত্রের ন্যায় লালন-পালন করেন। প্রভুর সংগে বালক পারস্য দেশে যায় এবং তার মৃত্যুর পর দাক্ষিণাত্যে এসে অল্পদিন বেরার প্রদেশের দেওয়ান (রাজস্ব বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মচারী) হাজী আব্দুল্লাহ খুরাসানীর চাকরি করে পরে বাদশাহী কর্মে প্রবেশ করেন। এক পর্যায়ে উপযুক্ত মনসর (ক্ষমতা ও সম্মানসূচক পদের শ্রেণি) এবং কারতলব খাঁ উপাধি সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছ হথেকে প্রাপ্ত হন। 

পরে জিয়াউল্লা খাঁর স্থলে বাংলার দেওয়ান নিযুক্ত হয়ে মুর্শীদ কুলী খাঁ উপাধি লাভ করে বাংলায় আগমন করেন। 

এ ঘটনা ১৭০১ খৃষ্টাব্দের। বাদশাহের পৌত্র আজীম-উশ-শান বাংলার সুবাদার (শাসনকর্তা) ছিলেন। দেওয়ান মুর্শিদ কুলী খাঁর রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা এবং সার্বিক কর্মে তার উপর বাদশা অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন এবং সব বিষয়ে দেওয়ানের কথা শুনতেন। এসবে বিরক্ত হয়ে যুবরাজ দেওয়ান মুর্শিদ কুলীকে খুন করর চেষ্টা করেন, কিন্তু মুর্শীদ সে চেষ্টা বিফল করে ঢাকা ত্যাগ করে মখ্সুস্-আবাদ নগরে দেওয়ানী অফিস ইঠয়ে নিয়ে  আসেন এবং পরে ঐ শহরকে মুর্শীদাবাদ নামে ভূষিত করেন।

যুবরাজ আজীম-উস-শান বিরক্ত হয়ে বাংলা ছেড়ে পাটনায় গিয়ে বসবাস করতে লাগলেন এবং আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর সিংহাসন নিয়ে যুদ্ধ বাধলে তিনি নিজ পুত্র ফরোখসিওরকে প্রতিনিধি স্বরূপ ঢাকায় রেখে দিল্লীর দিকে রওয়ানা হন। আর তখন মুর্শীদ কুলী খাঁ বাংলায় সর্বেসর্বা হলেন। মুঘল বাদশাহদের ক্ষমতা হ্রাস পাবার ফলে তিনি কালক্রমে বাংলায় প্রায় স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতে লাগলেন, কিন্তু কখনো দিল্লীর বাদশাহের ক্ষমতা অস্বীকার করেননি। ঘটনাক্রমে মুর্শীদ কুলী খাঁ বাংলার নবাবী লাভ করেন এবং বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন। 

ছবিতে মুর্শিদাবাদ ভ্রমণকালে তোলা মুর্শিদ কুলী খাঁর নির্মিত রাজধানীর জামে মসজিদ কাটরা মদজিদ। এখনে মুর্শিদ কুলী খাঁর সমাধি রয়েছে। 

সূত্র: মধ্যযুগে বাংলা, গ্রন্থকার- যদুনাথ সরকার (এসব বিষয়ে বাদশাহের হুকুমে মুন্সির জবানীতে ফারসী ভাষায় লিখিত কয়েকটি চিঠির অনুবাদ করেন গ্রন্থকার)।