জামায়াতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) তিনি জামায়াতের সহযোগী সদস্য পদে ফর্ম পূরণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগ দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ আব্দুর রব। জামায়াতের দলীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সঙ্গী হিসেবে জামায়াতের দুই নেতার উপস্থিতিতে তিনি আবারও এই দলে যুক্ত হলেন।
গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক বক্তব্যে এ সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে এবি পার্টি নিবন্ধন লাভ করে এবং তার নামে নির্বাচন কমিশন প্রতীক ও নিবন্ধন সনদ প্রদান করে। এরপর দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলে মজিবুর রহমান মঞ্জু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং নতুন কমিটি গঠিত হয়। নতুন কমিটির দায়িত্ব ছিল সংগঠনকে তৃণমূলে বিস্তার করা, মানুষের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে কাজ করা এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা। কিন্তু এসব কোনো কাজই বাস্তবে হয়নি।
জুলুমবাজ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, লুটপাট, মানুষের অধিকার হরণে জড়িত আওয়ামী লীগ সরকারের চাপের কারণে নিবন্ধন দেয়নি নির্বাচন কমিশন। তবে ৫ আগস্ট-পরবর্তী পটপরিবর্তনের পর আমরা নিবন্ধন পাই। নির্বাচন কমিশন আমার নামে নিবন্ধন সার্টিফিকেট ও প্রতীক বরাদ্দ করে। এরপর দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একটি নতুন কমিটি আত্মপ্রকাশ করে। সেই কমিটি দেশব্যাপী সংগঠনকে বিস্তার করা, সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো, সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কমিটি করা, জনসাধারণকে এই দলে সম্পৃক্ত করা, মানুষের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করা, মানুষের অধিকার কোথায় খর্ব, হরণ হচ্ছে তা মানুষের কাছ থেকে জানা এবং মানুষের অধিকার মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়ার যে মহান ব্রত নিয়ে আমরা এবি পার্টি গঠন করেছিলাম, তার আর কিছুই হচ্ছে না
সোলায়মান বলেন, এবি পার্টি একটি ঢাকাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। দেশের কোথাও দলের জনসম্পৃক্ততা নেই, বরং দিন দিন এবি পার্টির বিভিন্ন জেলার নেতারা পদত্যাগ করে দল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। অর্থাৎ এবি পার্টি মানুষের সেবা করবে, মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করবে, সমস্যার সমাধান করবে—সেখান থেকে এবি পার্টি অনেক দূরে সরে গেছে। আমাকে নামকা ওয়াস্তে দলের উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। বাস্তবে উপদেশ চাইলে উপদেশ দেওয়া যায়, না চাইলে তো আর উপদেশ দেওয়া যায় না। অতএব, আমি মনস্থির করেছি, এই পার্টি যে অঙ্গীকার করে নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে আমার মাধ্যমে, তার ছিটেফোঁটাও এখন দলের মধ্যে নেই। এখন তারা অন্য কাজে ব্যস্ত। এমন দলে থাকার চেয়ে না থাকাই শ্রেয় বলে মনে করে এবি পার্টির সব পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। এ মর্মে এবি পার্টির চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমি নতুন কোনো দলে নয়, আমার পুরনো রাজনৈতিক দল জামায়াতে আমি ফিরে যাব। এরই মধ্যে আমার সঙ্গে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। তিনি প্রাথমিকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। আমি ওনার সামনে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ঘোষণা দিয়েছি, আমি আবার জামায়াতে যোগদান করব। এখন শুধু লিখিত আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে। জামায়াতের মাধ্যমে আমরা যাতে সম্মিলিতভাবে এই দেশের সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধান, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া ও এ দেশকে সুন্দর দেশে পরিণত করতে পারি।