ঢাকা, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭ পৌষ ১৪৩২ | ১০ রজব ১৪৪৭

শিরোনাম

‘আহত বর, হাসপাতালের বেডেই বসলো ব্যতিক্রমী বিয়ের আসর’

‘আহত বর, হাসপাতালের বেডেই বসলো ব্যতিক্রমী বিয়ের আসর’

বিয়ের আয়োজন মানেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সাজানো মঞ্চ, ফুলে মোড়া আসর আর অতিথির কোলাহল। কিন্তু মানিকগঞ্জে দেখা গেল একদম ভিন্ন চিত্র। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে হাসপাতালে শয্যাশায়ী বর আনন্দ সাহা। তবুও থেমে থাকেনি বিয়ের জয়গান। এদিকে পূর্ব নির্ধারিত লগ্ন যেন বয়ে না যায় তাই হাসপাতালের বিছানায় বসেই সম্পন্ন হলো জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। এক অনন্য বিয়ের আয়োজন। মানিকগঞ্জের এই ব্যতিক্রমী বিয়ে যেন দেশের অনন্য নজির হয়ে রয়ে গেল। নেট দুনিয়াতে এই বিয়ে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে উঠেছে। 

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে মানিকগঞ্জের বেসরকারি আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের অস্থায়ীভাবে খালি রাখা একটি অংশে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করেন পরিবারের সদস্যরা।

জানা যায়, মানিকগঞ্জ শহরের চাঁন মিয়া লেনের বাসিন্দা অরবিন্দ সাহার বড় ছেলে অভিজিৎ সাহার বিয়ের তারিখ আগে থেকেই ঠিক ছিল। কিন্তু নির্ধারিত দিনটির আগেই ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা। ঢাকা থেকে ফেরার পথে ধামরাইয়ে দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন বর। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অসুবিধা সত্ত্বেও দুই পরিবারের সম্মতি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে বিশেষ কক্ষে সম্পন্ন হয় এ ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন।

ব্যতিক্রমী এই আয়োজনটি আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালের নিজস্ব ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। লাইভে দেখা যায়, বর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন, পাশে কনে। সাধারণ সাজসজ্জা, কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন ও হাসপাতালের কর্মীদের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয় সব আনুষ্ঠানিকতা। দেখে মনে হয়নি এ যেন হাসপাতাল, বরং ছোট্ট কোনো বিয়ের আসর।

আনন্দ সাহার পরিবারের সদস্যরা জানান, বরের শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়েই বিয়ের আয়োজন করা হয়। বরের বাবা অরবিন্দ সাহা জানান, আমরা ভাবতেই পারিনি হাসপাতালে এমন আনন্দ হবে। যেহেতু আগে থেকেই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিকঠাক ছিলো এজন্য তারিখ পরিবর্তন না করে নির্ধারিত তারিখেই বিয়ের পাক্কা আয়োজন সেরে নিলাম। 

তবে হিন্দু বাঙালি বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আচার হল সাত পাকে বাঁধা। বিয়ের দিন ছাদনাতলায় বর এলে কনেকে পিঁড়িতে বসিয়ে নিয়ে আসা হয়। কনের মুখ পান পাতা দিয়ে ঢাকা থাকে। বরের চারপাশে কনেকে ঘোরানো হয় সাতবার। এক্ষেত্রে অভিজিৎ সাহা পিঁড়িতে নয়, হাসপাতাল বেডে শুয়েই সাতপাঁক উপভোগ করলেন।

আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অ্যান্ড ইউনিট হেড ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, রোগী মানিকগঞ্জ সদরের বাসিন্দা। বাইক দুর্ঘটনায় তার দুই হাত ও এক পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে। গতকাল তার বিয়ের লগ্ন ছিল। পরিবার আমাদের বিষয়টি জানালে আমরা গুরুত্ব সহকারে কনসালটেন্টদের সঙ্গে আলোচনা করি। রোগীর অবস্থা আগের তুলনায় স্থিতিশীল মনে হওয়ায় কেবিনে নয়, হাসপাতালের অব্যবহৃত অংশে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করার অনুমতি দেওয়া হয়। আমাদের কর্তৃপক্ষ সব সময় রোগীদের সেবায় আন্তরিক।