ঢাকা, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সেহাঙ্গল বিপ্লব-এর তিনটি কবিতা

সেহাঙ্গল বিপ্লব-এর তিনটি কবিতা

আমি কি তাই?

তুমি যে কেমন, চোখে চোখ রেখে নিয়ে নাও কেন
আকাঙ্ক্ষার পুরো স্বাদ! যেভাবে রাঙাও ঘুমে
স্বপ্নের ময়ূর। শিহরিত স্পর্শে মুগ্ধ করো পৃথিবী অবাক
সৌন্দর্যের কাছে ফিরে মুছে দাও অসুন্দরের ঝুলকালি।

- আমি কি তাই?
তুমি কি তাই! তুমি কি তাই! তুমি যে পুরো সময়
কত লিখবে নাটক? সঙ সাজবো না আর।
শুধুই কথায় লাগে টান, কেন ভাঙে বুকের পাড়?
কিসে জাগে নীলপূর্ণিমায় ফিনফিনে মেঘের বান?

- আমি কি তাই?
তোমার কথায় শুনি কোন দূর নক্ষত্রের গান
উদাসীনতার নীরব মিছিল। মিছিলে কীভাবে
নিথর হাতের মুষ্ঠি ছোঁড়ো আসমানে! রাজপথে
তোমাকে চিনতে পারি খুব সহজেই-
বেতারফোনে শুনেছি কুয়াশাভেজা কষ্ট তোমার;
যত শুনি ততই মুগ্ধতার ডালপালা চড়ায়
ভোরের আঙিনায় সম্মোহনের মৌন ছায়া।

- আমি কি তাই?
আমি কি তাই? আমি কি তাই? বলছো যে
অন্য কিছু বলো।

- কী বলবো? আমি কি তেমন কেউ, যাকে
ভালোবাসা যায়? বরং তুমি তাকে নিয়ে ভাবো
যে তোমাকে সংযমী হতে বলে এবং
সে-ই তোমার পরম বন্ধু এখানে ওখানে সবখানে...!

 


আমাকে নষ্ট হতে দাও

আমি নষ্ট হবো জেনে তুমি কষ্ট পাও
মেঘের বিষাদে ভাঙো চোখ
শিশির কান্নার মতো মৌন আর্তনাদে যোগ-
বিয়োগের খাতায় প্রকৃত ফলাফল চাও।

নষ্টজলে আমি কি এতই ডুবে গেছি
বাঁচার চন্য ছাড়ছি আঁকুতি বুঁদবুঁদ?

তুমিও জানতে এই ডুবে যাওয়ার গভীরতা
এবং খুঁজতে আমাকে জানালায় চোখ রেখে
রাতের দেয়ালে তাই লিখেছিলে নিখোঁজ সংবাদ
হৃদপিণ্ডের ক্যানভাসে আঁকতে আমার শত ছবি।

বলি, এতোসব কাণ্ড যে তোমাকে আর মানয় না
জলস্রোতে কতোই তো ভেসে যায় বুনো ঘাসফুল।

যেন আমি কোনো জলকুমারীর বুকে নিমজ্জিত, তাই
তোমার সমস্ত সম্ভাবনা দিয়ে আমার উদ্ধার চাও।
সাগর নয়, সমুদ্র নয় এক অতল বিষন্নতায় ডুবে
অস্তগামী সূর্যের লাভায় পুড়ে হয়ে যাচ্ছি ছাই।

যদি এতোটাই বেসেছিলে ভালো তবে কেন এই
ঘরমুখো নাবিকের পথে পেতেছিলে বিষকাঁটা?

অতএব, মুছে ফেলো দেয়াল লিখন ফেরাও দৃষ্টি
ছিঁড়ে ফেলো হৃদপিণ্ডে আঁকা সেই ছবি।
বিশ্বাসীরা জেগে থাকে; তুলে নাও নোঙরের ভার
শুধু কষ্ট পেওনা তুমি, আমাকে নষ্ট হতে দাও।

 

সেই বেঞ্চ

সে তোমাকে ধোকা দিতে পারতো না
তুমি যদি একটি দিন নিয়ে বাইরে যেতে।
সে তোমাকে কখনো হারিয়ে ফেলতো না
তুমি যদি তাকে অন্ধকারে খুঁজে নিতে।
সে তোমার স্পর্শ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারতো
তুমি যদি তার স্পর্শেই কাতর হতে।

সে তোমার চোখে আঙুল দিয়েই দেখাতে পারতো
তুমি যদি অন্ধ হতে,
তুমি কি একটি দিন?
- না!
তুমি রাতের আঁধার?
- না, তা-ও না।
তুমি কি স্পর্শকাতর?
- কখনো না।
তবে তুমি অন্ধ।

বুকপকেটে হৃদয় রেখে হাতড়ে বেড়াও মানিব্যাগ
ওখানে তোমার যোগ্য স্থান আছে বলে মনে করছি না
তার চেয়ে ব্যাংক, বীমা কিংবা শেয়ার বাজার খুঁজে নাও
এসবের দাম চড়া, এলোমেলো খেয়ে পেট পঁচাবে না।

তুমি মানিব্যাগ খোঁজ?
- না, না।
তুমি এখানের যোগ্য?
- অবশ্য হ্যাঁ।
তুমি কি সঞ্চয়ী?
- হিসেবি না।
তুমি কখনো ভালোবেসেছো?
- যে আমাকে তুচ্ছ মনে করে তাকে ভালোবাসি এবং
তার ঘৃণা আমার আহার্য; দিনরাত সহ্যের ঢেকুর গিলে
রকমারী যন্ত্রণার স্নেহফুল ফোটাতে শিখেছি!

 

এমএস