ঢাকা, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭ পৌষ ১৪৩২ | ১০ রজব ১৪৪৭

শিরোনাম

ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা রক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল সুপ্রিম কোর্ট: প্রধান বিচারপতি

ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা রক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল সুপ্রিম কোর্ট: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা রক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল সুপ্রিম কোর্ট। আমরা ব্যর্থ হলে, দুর্বল শাসন ব্যবস্থা ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার সামনে কোনও সংস্কারই টিকবে না। বার (আইনজীবী সমাজ) ও বেঞ্চের (বিচারপতিরা) পারস্পরিক সহযোগিতা, পেশাগত নৈতিকতা এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধ রক্ষার মধ্য দিয়েই বিচার বিভাগের প্রকৃত শক্তি গড়ে ওঠে।

জুলাই বিপ্লব ও বিচারিক সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগ সংযত কিন্তু দৃঢ় ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৪ সালের বিচারিক সংস্কার রোডম্যাপের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংবিধানের মৌলিক কাঠামো মতবাদ বিচার বিভাগের জন্য পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে। জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতাকে সম্মান জানিয়ে বিচার বিভাগকে একই সঙ্গে বর্তমান সংবিধানের রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিদায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, আইনজীবী ও বিশিষ্ট অতিথিরা।

প্রধান বিচারপতি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি মূল অঙ্গ হচ্ছে বিধান সভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ। এগুলোর মধ্যে বিচার বিভাগ নাগরিকের ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার শেষ আশ্রয়স্থল। সুপ্রিম কোর্ট শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসনের অন্যতম ভিত্তি। এখানে কর্মরত প্রত্যেক আইনজীবী কার্যত জনসেবার অংশ। সংবিধান বিচার বিভাগকে কেবল আইন ব্যাখ্যার দায়িত্ব দেয়নি, বরং সাংবিধানিক মূল্যবোধের সক্রিয় অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে। মৌলিক অধিকার রক্ষা, ক্ষমতার বিভাজন, বিচারিক পুনর্বিবেচনা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আদালতের ভূমিকার পেছনে শক্তিশালী ও নৈতিক বার অপরিহার্য।

আইনজীবীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকদের পাশাপাশি আইনজীবীরাই আদালতের রায় নির্মাণের অন্যতম কারিগর। অনেক ঐতিহাসিক রায়ের পেছনে আইনজীবীদের গভীর আইনজ্ঞান, সাহস ও যুক্তির বড় অবদান রয়েছে, যদিও তারা সাধারণত জনসমক্ষে আলোচিত হন না।

জিবেন্দ্র কিশোর বনাম পূর্ব পাকিস্তান সরকার মামলার কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এ ধরনের মামলাগুলো প্রমাণ করে যে আদালত কেবল বিরোধ নিষ্পত্তির স্থান নয়, বরং আইন বিকাশেরও কেন্দ্র।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে মাসদার হোসেন মামলার ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও আইনজীবীদের অবদান অনস্বীকার্য। পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সেক্রেটারিয়েট প্রতিষ্ঠাসহ সাম্প্রতিক বিচারিক সংস্কার উদ্যোগে আইনজীবীদের সংহতি তাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

আইনজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, মক্কেলের স্বার্থরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হলেও আদালতের সামনে সত্য ও সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা আইনজীবীর সর্বোচ্চ নৈতিক দায়িত্ব। আইন পেশা কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থরক্ষার মাধ্যম নয়; এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থসম্পন্ন পেশা। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য আইনি সহায়তা ও প্রো-বোনো সেবাকে দাতব্য কাজ হিসেবে নয়, বরং পেশাগত দায়িত্ব হিসেবে দেখতে হবে। এ লক্ষ্যে আইন শিক্ষায় লিগ্যাল এইড, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাগত নৈতিকতা বিষয়ক কোর্স অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।