বৈশ্বিক অনলাইন স্বাধীনতার অবনতি চলমান থাকলেও বাংলাদেশে এর উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণতন্ত্র পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ফ্রিডম হাউস। এ বছর মূল্যায়নে থাকা ৭২টি দেশের মধ্যে ইন্টারনেট স্বাধীনতায় সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশে। এ বছর বাংলাদেশের ইন্টারনেট স্বাধীনতা সূচক পাঁচ পয়েন্ট বেড়ে ১০০-এর মধ্যে ৪৫ হয়েছে—যা গত সাত বছরে দেশের সর্বোচ্চ সূচক। ২০২৪ সালে সূচক ছিল ৪০। দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশের মধ্যে বাংলাদেশ কেবল পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে; তবে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের পেছনে অবস্থান করছে। পাকিস্তান ২৭ পয়েন্ট পেয়ে 'মুক্ত নয়' হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হয়েছে, আর শ্রীলঙ্কা ও ভারত যথাক্রমে ৫৩ ও ৫১ পয়েন্ট অর্জন করে দুটিই আংশিক মুক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) প্রকাশিত 'ফ্রিডম অন দ্য নেট ২০২৫' প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ফ্রিডম হাউসএই বার্ষিক গবেষণার ১৫তম সংস্করণে ডিজিটাল পরিমণ্ডলে মানবাধিকার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত সময়ে ইন্টারনেট স্বাধীনতার ধারা ও উন্নয়ন পর্যালোচনা করা হয়েছে। ফ্রিডম হাউসের এই সূচকটি ১০০-পয়েন্টের স্কেলে একটি সূচক নির্ধারণ করতে তিনটি বিভাগ জুড়ে—প্রবেশে বাধা, বিষয়বস্তুর ওপর সীমাবদ্ধতা এবং ব্যবহারকারীর অধিকার লঙ্ঘন—মোট ২১টি সূচক ব্যবহার করে প্রতিটি দেশের অনলাইন স্বাধীনতার মাত্রা মূল্যায়ন করে।
প্রতিবেদনে ফ্রিডম হাউস উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ এ বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী উন্নতি অর্জন করেছে, কারণ ২০২৪ সালের আগস্টে একটি শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থান দেশের কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক সংস্কার করেছে। এ বছর বাংলাদেশের ইন্টারনেট স্বাধীনতা সূচক পাঁচ পয়েন্ট বেড়ে ১০০-এর মধ্যে ৪৫ হয়েছে—যা গত সাত বছরে দেশের সর্বোচ্চ সূচক। ২০২৪ সালে সূচক ছিল ৪০। তবে এই উন্নতির পরও ফ্রিডম হাউসের ইন্টারনেট স্বাধীনতা সূচকে দেশ এখনও 'আংশিক মুক্ত' শ্রেণিতে রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ এই অবস্থান ধরে রেখেছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের অধীনে বাস্তবায়িত বেশ কয়েকটি নীতিগত পরিবর্তনের কথাও উল্লেখ করেপ্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মুহাম্মদ এমদাদ-উল-বারীকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। তিনি ইন্টারনেট শাটডাউন রোধে নীতিগত পরিবর্তন আনেন এবং ইন্টারনেট প্রবেশাধিকারকে মানবাধিকার উদ্বেগ হিসেবে বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন। আরও সংস্কার আসে ২০২৫ সালের মে মাসে, যখন সরকার বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ)—যা ইন্টারনেট সেন্সরশিপের কঠোর কাঠামো হিসেবে পরিচিত ছিল—বাতিল করে এবং এর পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ (সিএসও) জারি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিএসও-তে অনলাইনে হয়রানি ও যৌন শোষণের বিরুদ্ধে সুরক্ষাসহ কিছু ইতিবাচক বিধান রয়েছে। তবে বিষয়বস্তু অপসারণ, অনলাইন বক্তব্যের জন্য ফৌজদারি শাস্তি এবং নজরদারি-সংক্রান্ত উদ্বেগজনক নিয়মগুলো এতে আগের মতোই বহাল রয়েছে।