জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রত্যেক উপদেষ্টা নিজের আখের গোছানোর কাজ করে রেখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমাদের দেশের ছাত্র-জনতা, শিক্ষক-চিকিৎসকসহ নানান পেশার মানুষেরা তাদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে সরকারের বসিয়েছে। কিন্তু খবর পেলাম তারা নাকি ৩০০ কোটি টাকা দিয়ে কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে গাড়ি কিনছেন। অথচ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর কথা বললেই তাদের কাছ থেকে শুনতে হয় সরকারের টাকা নেই। আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা এ ইন্টেরিম গভর্নমেন্টকে বসিয়েছি, অথচ তারা আজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছেন। তারা শিক্ষার বিপক্ষে এসে দাঁড়িয়েছেন।
রোববার (১২ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন- এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির প্রমুখ। এর আগে সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সচিবালয়ে যায়। সেখানে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়ায় এ বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি বলে জানান শিক্ষক নেতারা। দুপুর ১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ফিরে এসে তারা দুটি ঘোষণা দেন। একটি হলো- প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে সরে তারা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা ছাড়বেন না। দ্বিতীয়টি হলো- মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করবেন। ঘোষণার পর দুপুর দেড়টার দিকে অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন ও অধ্যক্ষ আজিজীর নেতৃত্বে শিক্ষকদের একটি পক্ষ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে চলে যায়। অন্যদিকে আরেক পক্ষ প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণার দাবি তোলে। তারা শহীদ মিনারে যেতে অস্বীকৃতি জানান।
শিক্ষা কমিশন গঠন না করার সমালোচনা করে সামান্তা শারমিন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর দেশে গণঅভ্যুত্থান পরিলক্ষিত হয়েছে। তারপর আমাদের আশা ছিল বাংলাদেশে একটা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হবে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে যে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেওয়ার চতুরতা শেখ হাসিনা করে গেছেন, তা ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য একটা শিক্ষা কমিশন জরুরি ছিল। দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে পুরো দেশটাকে একটি নির্বাচনের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। অথচ আমার শিক্ষকদের, শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙক্ষা পূরণ করার চেষ্টা করা হলো না। বুলেট দিয়ে, গুলি করে গণহত্যা চালানোর চেয়ে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা কোনো অংশে কম কিছু না।শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে সবচেয়ে বেশি যে কাজটি করা হয়েছে তা হলো শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বেতন-ভাতা সবক্ষেত্রে চরম অবহেলা করা হয়েছে। শিক্ষকদের মাত্র ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়া লাগবে, এটাও যদি ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের কাছে চাওয়া লাগে? তাদের অবস্থান দেখে স্পষ্ট যে, শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করতে তাদের আন্তরিকতা কতটুকু!
শিক্ষা উপদেষ্টার সমালোচনা করে সামান্তা শারমিন বলেন, বর্তমান শিক্ষা উপদেষ্টাকে নিয়োগের পর আমরা মনে করেছিলাম তিনি নিজে যেহেতু শিক্ষক, সেজন্য শিক্ষকদের অবহেলার জায়গাটা বুঝবেন। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পর তার কর্মকাণ্ড। তার ব্যাপারে সব পক্ষের অভিযোগ তিনি কাউকে সময় দিতে চান না। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার সব উপদেষ্টাকে সবসময় অ্যাভেইলঅ্যাবল থাকতে হবে। এটাই মানুষের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু তারা নিজেদেরকে অনেক বড় কিছু মনে করেন, হয়তো তারা বড় কিছু কামিয়েছেন। এজন্য তারা আমাদের প্রান্তিক শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে রাজি হন না। জাতীয়করণ দূরে থাক, ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া আর ৫০০ টাকা চিকিৎসাভাতা বাড়ানো যাচ্ছে না! এ দাবি জানাতে ঢাকায় আসায় শিক্ষকদের মেরে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এটা সহ্য করা হবে না। এনসিপি শিক্ষকদের পাশে আছে, থাকবে। আপনারা আপনাদের দাবির প্রতি অবিচল থাকুন। সরকারকে এ দাবি পূরণ করতেই হবে।