গ্লোবাল টিভি ছবি
আরিফ সম্রাট, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : ঢাকা সদরঘাট, যা সাধারণত ঈদুল ফিতরের আগে যাত্রীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে, এবার যেন অন্যরকম এক দৃশ্যের সাক্ষী। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত বিলাসবহুল লঞ্চগুলো যাত্রী সংকটে কার্যত ফাঁকা পড়ে আছে। এই চিরচেনা ব্যস্ততা ও কোলাহলপূর্ণ ঘাটে এবার নেমে এসেছে এক অস্বাভাবিক নীরবতা। সাধারণত ঈদের আগে সদরঘাটে হাজারো মানুষের ঢল নামে। কিন্তু এবছর পরিস্থিতি ভিন্ন। লঞ্চগুলোতে যাত্রী সংকট এতটাই প্রকট যে অনেক লঞ্চ মালিকরা কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের একটি বড় অংশ সড়কপথে যাতায়াত করছে। আগে ঈদের সময় ৩৫ শতাংশ যাত্রী নৌপথে যেতেন, এখন তা কমে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে আগে ১৮টি লঞ্চ চললেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে চারটিতে। এ ছাড়া যাত্রী সংকটের কারণে ঢাকা থেকে ৪৩টি নৌপথের মধ্যে এখন চালু রয়েছে মাত্র ৩৫টি।
লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, পদ্মা সেতু এবং মহাসড়কগুলোর উন্নয়ন নৌযাত্রায় যাত্রীদের আগ্রহ কমিয়েছে। সদরঘাটসহ বিভিন্ন নৌবন্দরেও আগের মতো যাত্রীদের ভিড় নেই। বরিশাল, ঝালকাঠি, ও ভাণ্ডারিয়াগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। তবে চাঁদপুর, ভোলার চরফ্যাসন ও লালমোহন রুটে যাত্রীদের চাপ কিছুটা বেশি রয়েছে।
ঈদে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে। কোনো ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচল করতে পারবে না। পুরোনো লঞ্চগুলোর ত্রুটি চিহ্নিত করে সেগুলো সারিয়ে তোলা হচ্ছে। তদারকির জন্য ঈদের সময় নৌপথে বাড়তি নজরদারি চালানো হবে।
ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, নৌপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী বহন বা ভাড়া আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লঞ্চ মালিকরা বলছেন, যাত্রী সংকটের কারণে নির্ধারিত ভাড়া তুলতেই সমস্যা হচ্ছে। অন্য সময় যাত্রীর অভাবে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নেয়া হলেও ঈদ মৌসুমে নির্ধারিত ভাড়া আদায়ের সুযোগ থাকে।
তবে জ্বালানি খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের কারণে ভাড়া কিছুটা বাড়ানোর দাবি করেছেন তারা। ঢাকা-বরিশাল রুটে ঈদের সময় ডেক ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, এবং ডাবল কেবিন ১৮০০ থেকে ২৪০০ টাকায় দাঁড়ায়।
এবার ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল রুটে এমভি এমখান নামের একটি অত্যাধুনিক লঞ্চ যুক্ত হচ্ছে। ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বিশেষ ঈদ লঞ্চ সার্ভিস।
লঞ্চ মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক হান্নান মাহমুদ বলেন, ২৫ রোজার পর যাত্রী সংখ্যা বাড়বে বলে আমরা আশা করছি। তবে পদ্মা সেতু ও উন্নত সড়ক যোগাযোগের কারণে আগের মতো চাপ থাকবে না। তবুও যাত্রীদের জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত রয়েছি।