ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫ | ৭ মাঘ ১৪৩১ | ২০ রজব ১৪৪৬

বিজয়ের মাস : ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১

বিজয়ের মাস : ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১

গ্লোবাল টিভি ছবি

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৮ ডিসেম্বর মুজিবনগর থেকে দেয়া এক বেতার ভাষণে জাতির উদ্দেশে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। পাকিস্তানি হানাদাররা এখন প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের পরাজয় এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।

তাজউদ্দীন বলেন, আজ আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে শত্রুর ওপর শেষ আঘাত হানতে হবে এবং বাংলাদেশের মাটিতে তাদের কবর রচনা করতে হবে। দেশ যখন আমাদের আহ্বান জানাচ্ছে, তখন সে আহ্বানে যেন আমরা সাড়া দিতে পারি। আগামীকাল যেন কখনো আমাদের অপবাদ দিতে না পারে যে, আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করিনি।

একইসঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদ নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দেওয়ার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই উপমহাদেশে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রস্তাব তুলেছে, তাতে বোঝাই গেছে সংঘর্ষের মূলে সে পৌঁছায়নি। এর মূল কারণ বিষয়ে আমেরিকা চোখ বন্ধ করে আছে। এটা তার মানসিক বিকৃতির পরিচায়ক। চীন পাকিস্তানকে সবসময় বাংলাদেশে গণহত্যা চালাতে উসকানি দিয়েছে।  

৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এইচ এফ জে মানেকশ। আকাশবাণী রেডিও থেকে উর্দু, হিন্দি ও পশতু ভাষায় এটি প্রচারিত হয়।

৮ ডিসেম্বর কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আগামী ৩ দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের ভেতরে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। তবে পশ্চিম রণাঙ্গনে আরো কয়েকদিন যুদ্ধ চলবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ বিতাড়িত। আমিও জাতিসংঘ বুঝি না। আমাদের নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী না বলা পর্যন্ত ভারতীয় সেনারা এগিয়ে যাবে। নিক্সন কিংবা ইয়াহিয়া তাদের গতিরোধ করতে পারবে না।

৮ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের সব পাটকল, চা বাগান, ব্যাংক, বীমা ও শিল্প কলকারখানা সরকারি করা হবে। এই বিষয়ে ঢাকাতে মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভাও সম্প্রসারণ করা হবে। জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এই মন্ত্রিসভায় থাকবেন। আগামী সপ্তাহ থেকে সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করা হবে। সামনের সপ্তাহে জেলাগুলোতে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে। শরণার্থীরা নিজ নিজ ভূমিতে শিগগির ফিরে যেতে পারবেন।