ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩ | ৮ চৈত্র ১৪২৯ | ১ রমজান ১৪৪৪

জুন থেকে পাইপলাইনে গ্যাস পাবে ১১ জেলার মানুষ

জুন থেকে পাইপলাইনে গ্যাস পাবে ১১ জেলার মানুষ

ছবি: গ্লোবাল টিভি

সোহেল রানা, নীলফামারী: উত্তরের জেলা নীলফামারীতে পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের দাবী দীর্ঘদিনের। ২০১১ সালে সেই দাবি পূরণের স্বপ্ন দেখান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ২০১৮ জুন হতে ২০২০পর্যন্ত ধরা হয়েছিল। করোনা মহামারী আর ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। ইতোমধ্যে ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পাদন করতে পেরেছে ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। 

চলতি বছর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আওতাধীন পেট্রোবাংলার গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড (জিটিসিএল) কর্তৃক পাইপলাইন স্থাপন হলে নীলফামারীতে মিলবে  প্রাকৃতিক গ্যাস।

জানা যায়, বগুড়া থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের প্রায় ১৫০কিলোমিটারে পাইপলাইন স্থাপন শেষ পর্যায়ে। ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রকল্প ব্যয়ে ৬টি ছোট বড় নদী পেরিয়ে আসা তিন স্টেশনের এই গ্যাস লাইনটি ভাগ্য ফেরাবে উত্তর জনপদের ১১টি জেলার মানুষের। ইতোমধ্যে সৈয়দপুরে বসানো হচ্ছে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি সেন্ট্রাল গ্যাস সাপ্লাই স্টেশন (সিজিএস)। এছাড়াও রংপুরে ৫০ মিলিয়ন ও পীরগঞ্জে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতা সম্পন্ন টাউন বর্ডার স্টেশন (টিবিএস) স্থাপন করা হয়েছে।

নীলফামারী সদরের সংগলশী ইউনিয়নে অবস্থিত উত্তরা ইপিজেড পর্যন্ত নির্ধারিত এই গ্যাস লাইনে ভাগ্য ঝুলে আছে সৈয়দপুর থেকে নীলফামারী সদরের রামগঞ্জ পর্যন্ত ছোট বড় কয়েক শতাধীক শিল্প প্রতিষ্ঠানের। গ্যাসের জন্য তীর্থের কাকের মতো চেয়ে আছে এ অঞ্চলের মানুষ। গ্যাস পেলেই কৃষিনির্ভর এ অঞ্চলে ঘটবে শিল্প বিপ্লব বদলে যাবে জীবনমান। তাই অধিকার আদায়ের দ্বারপ্রান্তে এসে উচ্ছ্বসিত উত্তরের মানুষ। প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ঘাটতি  মেটানো, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নিমিত্তে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্যিকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের আওতায় আসবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ঠ মহলের। তবে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়িতেও গ্যাস চায় এ অঞ্চলের মানুষ। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে জ্বালানি আর কয়লানির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগের আওতায় আনার দাবী জানান ব্যবসায়ীরা।  

সানিটা সিরামিকসের এমডি সামিউল ইসলাম শাওন বলেন, আমরা ২০০২ সাল থেকে সানিটা সিরামিক্স স্যানিটি ওয়্যার ও ২০১৫সাল থেকে সানিটা টাইলসের উৎপাদন শুরু করি। যার জ্বালানি হিসেবে আমরা কয়লা ব্যবহার করি। কিন্তু কয়লার দাম বর্তমানে চার গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই উৎপাদন সচল রাখাটা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের প্রতিষ্ঠানের ২হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর জীবিকা ঝুলে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বগুড়া থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপলাইন স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। সৈয়দপুর থেকে অল্প কিছু দূরেই নীলফামারী। নীলফামারীর শিল্প কল-কারখানা গুলোকেও গ্যাস সংযোগের আওতায় আনা হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা সচল থাকবে। তাই নিত্য নতুন কর্ম সংস্থান সৃষ্টিকে উপলক্ষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের জোড় দাবী জ্বালানি ও কয়লা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে গ্যাস সংযোগের আওতায় আনা হোক।    

গ্লোরি সিরামিকসের চেয়ারম্যান জিকরুল হক বলেন, ২০১০সালে নীলফামারী সদরে স্থাপন করা হয় গ্লোরী সিরামিক্স স্যানিটি ওয়্যার কোম্পানিটি। যা ডিজেল, পায়োলইসিজ ও ফার্নিস ওয়েল দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। যেসময় প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছি। সে সময়ে দাম খুব সীমিত ছিলো। কিন্তু বর্তমানে অনেক দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু মাননীয় প্রধামন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাস লাইন স্থাপন করেছেন। আমরা চাই তেল ও কয়লাভিত্তিক জ্বালানি নির্ভর সকল শিল্প কলকারখানাকে গ্যাস সংযোগের আওতায় আনা হউক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটা আমাদের প্রাণের দাবী।

চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি প্রকৌশলী এস এম শফিকুল আলম ডাবলু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীলফামারীর কথা চিন্তা করে এখানে একটি ইপিজেড দিয়েছেন। সেটাকে কেন্দ্র করে নীলফামারীতে কয়েক শতাধিক ছোট-বড় কলকারখানা গড়ে উঠেছে। নীলফামারীতে এখন উৎপাদন মুখী চিন্তা-ভাবনা চলছে। এখানে নতুন নতুন অনেক উদ্যোক্তা তৈরী হয়েছে। সৈয়দপুর থেকে নীলফামারীর রামগঞ্জ পর্যন্ত গ্যাস সংযোগের আওতায় আনা হলে নীলফামারী একটি স্বনির্ভর জেলা হিসেবে পরিণত হবে। অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে দ্রুত ছোট-বড় সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সংযোগের আওতায় আনার জন্য বিনিত আহব্বান করছি।

পেট্রোবাংলা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপক প্রকোশলী আব্দুস সালাম মোল্লা জানান, ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি পাস হয়। বিদেশ থেকে মালামাল ক্রয় করে বগুড়া থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত ১৫০কিলোমিটার ৩০ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইন স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পটি ৫টি প্যাকেজে ভাগ করে সম্পাদন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পাইপলাইন স্থাপন শেষের দিকে। প্রকল্পের আওতায় রংপুরে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতা সম্পন্ন টাউন বর্ডার স্টেশন (টিবিএস), পীরগঞ্জে ২০মিলিয়ন ক্ষমতা সম্পন্ন টিপিএস ও সৈয়দপুরে ১০০মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতা সম্পন্ন সিজিএস স্থাপন করা হবে বিদেশী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

এএইচ