ফাইল ছবি
গত জানুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৯ জন পরিবহন চালক ও শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৩ জন চালক এবং ২৬ জন শ্রমিক। জানুয়ারি মাসে সারা দেশে মোট ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, প্রতি তিনটি দুর্ঘটনায় অন্তত একজন পরিবহন চালক-শ্রমিক মারা গেছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে শনিবার এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারিতে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৫ জন নিহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৮৯৯ জন। একই সময়ে রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত ও ৭৮ জন আহত হয়। নৌপথে ১৩টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত, একজন আহত ও ছয়জন নিখোঁজ হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৬৫০টি দুর্ঘটনায় ৬৪২ জন নিহত ও ৯৭৮ জন আহত হয়েছে।
২০২২ সালের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫.৩ শতাংশ ও আহত ১০.০৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে প্রাণহানি কমেছে ৪.৬ শতাংশ।
সড়কে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে চালক-শ্রমিক ছাড়া ৯ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য, ৮৪ জন পথচারী, ৮০ জন নারী, ৪৬ শিশু, ৪৬ জন শিক্ষার্থী, একজন সাংবাদিক, ৯ জন শিক্ষক, দুই প্রকৌশলী, দুজন আইনজীবী ও আটজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময়ে ঘটা দুর্ঘটনায় মোট ৮১৬টি যানবাহনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১২.৫ শতাংশ বাস, ২৪.৭৫ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান ও লরি, ৫.০২ শতাংশ কার, জিপ, মাইক্রোবাস, ৫.৮৮ শতাংশ অটোরিকশা, ২৭.৩২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪.৫৮ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজি বাইক, ৯.৯২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
এসব দুর্ঘটনার মধ্যে ৫১.৬০ শতাংশ গাড়িচাপা, ২২.২৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১২.৪৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, ১১.৯৭ শতাংশ অন্যান্য কারণে, শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ১.০১ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৯.৫১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৮.৬১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৪.৪৫ শতাংশ সংযোগ সড়কে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫.২২ শতাংশ ঢাকা মহানগরে, ১.১৮ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরে, ১.০১ শতাংশ লেভেলক্রসিংয়ে হয়েছে।
সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে ১৭ জানুয়ারি। এদিন ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ২ জানুয়ারি। এদিন ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়। এক দিনে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ১১ জানুয়ারি। এদিন ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে ৫ জানুয়ারি। এদিন ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ৭১ জন আহত হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো- বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা ইত্যাদি।
এএইচ