ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩ | ৮ চৈত্র ১৪২৯ | ১ রমজান ১৪৪৪

মুন্সিগঞ্জে প্রতি স্ট্যান্ডে চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়

মুন্সিগঞ্জে প্রতি স্ট্যান্ডে চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়

ছবি: গ্লোবাল টিভি

মো: রাজিবুল হাসান জুয়েল, মুন্সিগঞ্জ:  মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় বিভিন্ন স্ট্যান্ড থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজি  চালকদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। চালকেরা বলছেন, স্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রী নিয়ে গেলেই ১০ থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সিএনজি অটোর জন্য দিতে হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চাঁদা তুলছে এক শ্রেণির চাঁদাবাজ। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের পৌরসভা মোড় এলাকা থেকে শতাধিক সিনজি চালিত রিকশা, আড়াই থেকে ৩ শতাধিক ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করে। প্রতিদিন  কয়েক হাজার মানুষ এসব যানবাহনে চড়ে সদরের চিতলিয়া, আধারা, মাকাহাটি, খাসেরহাট, টরকি, ফুলতলা, বাংলাবাজার, মুক্তারপুর, পেট্রোলপাম্প, সিপাহীপাড়া যাতায়াত করে। 

পৌরসভার মোড় এলাকার স্ট্যান্ড ও সেখান থেকে গাড়িগুলো যে সব স্ট্যান্ডে যায় তার প্রতিটি গাড়ি থেকে সিরিয়াল দেয়ার নাম করে প্রতিদিন চাপ প্রয়োগ করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

গাড়ি চালকরা জানান, ব্যাটারি চালিত রিকশার জন্য প্রতিদিন ১০-২০, বড় ইজিবাইক ২০-৩০ টাকা, সিএনজি রিকশা প্রতি ৪০ টাকা চাঁদা আদায় করে স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজরা। 

গত মঙ্গলবার পৌরসভা এলাকায় স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভা মোড় এলাকার থেমে থাকা গাড়ি যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময় মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি রিকশাচালকের কাছ থেকে ১০ টাকা করে আদায় করছেন। পরিচয় সূত্রে জানা যায়, তার নাম মো. আব্বাস। সে সময় মো. আব্বাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গাড়ির সিরিয়াল ঠিক করে দেই। খুশি হয়ে চালকরা ১০-৫ টাকা করে দেন। না দিলেও জোর করি না।

তবে এ স্ট্যান্ডের কয়েকজন ইজিবাইকচালক অভিযোগ করে বলেন, এই স্ট্যান্ডে চারজন চাঁদাবাজি করে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া রবিন। তাকে টাকা না দিলেই গাড়ি ভাঙচুর করে। গাড়ির টায়ার নষ্ট করে দেয়। গাড়ি আটকে রাখে। মারধর করে। এমন অত্যাচার কয়েক বছর ধরেই চলছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এগুলো করা হচ্ছে। অথচ তারা দেখেও না দেখার মতো থাকে। খেসারত গুনতে হয় আমাদের। 

চাঁদা উত্তোলনের বিষয়ে রবিন হোসেন বলেন, গাড়ির সিরিয়াল ঠিক রাখি। যানজট কমাতে কাজ করি। এর বিনিময়ে মজুরি হিসেবে গাড়ি প্রতি ১০-২০ টাকা করে নেয়া হয়। তবে কারো কাছ থেকে জোর করা হয় না। কারো গাড়িও আটকানো হয় না।

গাড়ির সিরিয়াল ঠিক রাখা ও যানজট নিয়ে  কাজ করার অনুমতি কোথায় পেলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৌরসভা থেকে দেয়া হয়েছে। কে দিয়েছে, সেটা বলা যাবে না।

একই চিত্র শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাজার মুন্সিরহাট। সেখানেও গাড়ি আটকে প্রকাশ্যে চাঁদা তোলেন রবিন, আনোয়ার হোসেন, আলম, মনসুর নামের কয়েকজন ব্যাক্তি। 

অভিযোগের বিষয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, তার লাইন থেকে সদরের খাসকান্দি, উত্তর চরমসুরা, দক্ষিণ চরমসুড়া, আলীরটেক পর্যন্ত ৭০-৮০ টি ব্যাটারি চালিত রিকশা ও বড় ইজিবাইক চলাচল করে। গাড়িচালকদের মধ্যে যেন সিরিয়াল নিয়ে ঝগড়াঝাটি না হয় সে বিষয়টি দেখে রাখেন তিনি। এজন্য গাড়িচালকরা নিজেরেই ১০ টাকা ২০ টাকা করে দেন। কারো কাছ থেকে জোর করেন না। তবে মুন্সিরহাট থেকে আধারা, চিতলিয়া এবং মুন্সিগঞ্জ শহরে যাওয়ার গাড়ি গুলো রবিনরা নিয়ন্ত্রণ করে তারা গাড়িচালকদের কাছ থেকে জোর করে টাকা পয়সা আদায় করে। 

জোর করে কারো কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে না বলেন দাবি করেন রবিন। বলেন, হাটে সব সময় যানজট থাকে। যানজট নিরসনের কাজ করি। এজন্য যে যা দেয় তাই নেই। যানজট নিরসনের কাজ পৌরসভার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে।

শহর বাজারের স্ট্যান্ড থেকে দক্ষিণ ইসলামপুর, যুগনীঘাট হয়ে চর কিশোরগঞ্জ যাতায়াত করে  ৩০টি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত ১৫-২০টি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ৪-৫ টি সিএনজি। এগুলো থেকে চাঁদা তোলা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এখানকার অনেক চালক বলেন, প্রতিটি গাড়ি থেকে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেন কাশেম মোল্লা। টাকা না দিলে মারধর করেন। গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন। প্রকাশ্যে এমন চাঁদাবাজি হচ্ছে। আমাদের উপর প্রকাশ্যে জুলুম করা হচ্ছে। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন কাশেম মোল্লা। তিনি বলেন, কারো কাছ থেকে জোর করে চাঁদা তুলি এটা বলার সাহস কারো নেই। কেউ সামনে এসে বলতে পারলে শাস্তি মাথা পেতে  নেব। বাজারের যেখান থেকে তিনি টাকা তোলেন, সেটা পৌরসভা থেকে লিজ নেয়া হয়েছে বলেও দাবি তার। 

তবে পৌরসভা থেকে কাউকে কোথাও গাড়ির সিরিয়াল ঠিক করার নামে টাকা তোলার অনুমতি দেয়া হয়নি জানিয়েছেন মুন্সিগঞ্জ পৌর মেয়র ফয়সাল বিপ্লব। তিনি বলেন, এসব কাজ সম্পূর্ণ বেআইনি। যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দাবি করি।

এ তিনটি স্ট্যান্ডের মতই মুন্সিগঞ্জের প্রতিটি স্ট্যান্ডে চিত্র কোথাও গোপনে, কোথাও প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চলছে। কোথাও চলছে মাসিক চাঁদাবাজি ও। সদরের চিতলিয়া এলাকায় মো. খোকা, মুক্তারপুর বাসস্ট্যান্ডে সোহাগ, সিরাজদিখানের ইছাপুরা দুলাল, দেলোয়ার হোসেন দেলু নামের কয়েকজন নিয়মিত চাঁদা তুলে আসছেন।

এসব স্ট্যান্ডের চালকরা বলেন, সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণসহ সব ধরনের ব্যবস্থা, দেখবালের দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ দায়িত্ব ঠিকমত পালন করে না। অনেক স্ট্যান্ডে পুলিশও দেয়া হয় না। এতে প্রকাশ্যেই চাঁদা আদায় করা হয়। আমাদের পরিশ্রমের টাকা প্রতিটি স্ট্যান্ডে জোর করে নিয়ে যায় তারা। প্রতিদিন সড়কে ৫০-১০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। বড় গাড়ি গুলো থেকে মাসিক ভিত্তিতে আরো বেশি চাঁদা তোলা হয়। অথচ আমরা কিছু বলতে পারি না। কারো কাছে কিছু বলেছি, এমনটা জানাজানি হলে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরুতে পারবো না। আমরা এর প্রতিকার চাই।

তবে যে কোনো চাঁদাবাজের বিষয়ে জেলা পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে বলে জানান মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান আল মামুন। তিনি বলেন, পরিবহন স্ট্যান্ডে কোনো সংগঠন কিংবা ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুন্সিগঞ্জে অতীতেও এর নজির রয়েছে।

এএইচ