ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ১৮ রমজান ১৪৪৫

মিশিগানে দূতাবাস কর্মকর্তা হেনস্থার শিকার: কনস্যুলেট সেবা স্থগিত

মিশিগানে দূতাবাস কর্মকর্তা হেনস্থার শিকার: কনস্যুলেট সেবা স্থগিত

ছবিঃ: সংগৃহীত

সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান, মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যে বসবাসরত বাঙালিদের বহুল প্রত্যাশিত চারদিন ব্যাপি ভ্রাম্যমাণ কন্স্যুলার সেবা তৃতীয় দিনেই স্থগিত হয়ে যায়। এতে সেবা নিতে আসা বাঙালিদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

জানা যায়, মিশিগানে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব মুহাম্মদ আব্দুল হাই মিল্টন বিক্ষুব্ধ প্রবাসীদের হাতে হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। রবিবার রাত ১০টার দিকে ডেট্রয়েট ডাউনটাউন নদীর পাড়ে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় মিশিগানের ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। 
 
সোমবার বিকালে কনস্যুলার ক্যাম্পের স্থানীয় আয়োজকরা এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সচিব মিল্টনসহ দূতাবাস কর্মকর্তারা রোববার রাতে ডেট্রয়েট ডাউনটাউন নদীর পাড়ে ঘুরতে যান। মিশিগানে স্থায়ী কনস্যুলেট অফিসের দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য নদীর পাড়ে যান ৭-৮ জনের একটি দল। দূতাবাস সচিব মিল্টন নদীর পাড়ে স্মারকলিপি গ্রহণ করেননি। দূতাবাসের অফিসিয়াল ই-মেইলে পাঠানোর পরামর্শ দেন। এতে ক্ষেপে যান তারা। তারা মিল্টনকে গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তাকে মারধরের জন্য চড়াও হন। এ ঘটনায় ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলার সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ দূতাবাস, ওয়াশিংটন ডিসি এর তত্ত্বাবধানে গত ১৯ থেকে ২২  আগস্ট পর্যন্ত ৪ দিন ব্যাপি মিশিগানের হ্যামট্রামেক সিটির আমিন রিয়েলিটি অফিসে ভ্রাম্যমান কন্স্যুলার সেবার আয়োজন করেন। প্রথম দিনের কার্যক্রম অত্যন্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হলেও দ্বিতীয় দিন সেবা নিতে আসা অনেকেই অভিযোগ করতে থাকেন, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সেবা গ্রহিতাদেরকে সুযোগ না দিয়ে আয়োজকদের কেউ কেউ আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে অন্যদেরকে সেবা প্রদান করছেন। এই বিষয়ে আয়োজকদের অন্যতম মিশিগান মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুস শাকুর খান মাখন ও সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ মোতালিবের দৃষ্টিগোচর হলে তারা আয়োজক কমিটির  সাথে কথা বলেন।

জানা যায়, এই বিষয়ে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনাকর কথাবার্তা হয়। বিষয়টি মিশিগান মহানগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানতে পেরে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে আসেন। 

বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সম্পর্কে দূতাবাসের কর্মকর্তারাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আয়োজকদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের প্রভাব বিস্তার নিয়েই মূলত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে অনৈতিক আর্থিক লেনদেন করে কাউকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেয়া সংক্রান্ত কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। আয়োজক কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনা করে সব সমস্যার সমাধান হবে। কন্স্যুলার সার্ভিসের সেবা প্রদান অব্যাহত থাকবে।’ 

আয়োজকদের মধ্যে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মিশিগানের সভাপতি জাবেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সুমন কবির বলেন, কোন ধরণের অনৈতিক আর্থিক লেনদেন হয়নি। কেউ প্রমাণ করতেও পারবে না। যারা এসব বলেছেন, তারা চরম মিথ্যাচার করছেন। যেটুকু বিশৃঙ্খলা হয়েছে, সেটা আয়োজকদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির কারণেই হয়েছে। এছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে জানা যায়, মিশিগান মহানগর আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দের দ্বন্দ্বের জেরেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল।


এদিকে স্মারকলিপি প্রদান করতে যাওয়া প্রতিনিধি দলের সদস্য শাকের উদ্দিন সাদেক সার্বিক বিষয় নিয়ে এক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। শাকের উদ্দিন সাদেক বলেন, ‘দূতাবাস কর্মকর্তাদের সাথে শারীরিক প্রতিবন্ধী, বয়স্ক পুরুষ-মহিলা, শিশুদের সেবা প্রদান করতে না পারার বিষয় নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ঘটেছে। তবে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেনি। তবে দূতাবাস কর্মকর্তাদের সাথে ঐ সময় বিষয়টি মিমাংসা করে চলে আসি।’

এএইচ