ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০২৩ | ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ | ১৮ জ্বিলকদ ১৪৪৪

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে!

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে!

ছবি সংগৃহীত


আতিক হেলাল : ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক, আজ বসন্ত।’ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতায় ঋতুরাজকে আলিঙ্গনের আহ্বান এটি। তবে আজ পহেলা ফাল্গুন না হলেও উৎসব প্রিয় নাগরিকদের হৃদয়ে বসন্ত যেন এসে গেছে। ফুল ফোটার এই ঊষালগ্নে রঙের কোলাহলে এরই মধ্যে ভরে উঠেছে চারদিক।

পঞ্জিকার পাতায় আজ ৩০ মাঘ ১৪২৬। কাল শুক্রবার পহেলা ফাল্গুন। এরই মধ্যে শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। গাছে গাছে স্নিগ্ধ সবুজ নতুন পাতা, ধীর লয়ে বাতাসের বয়ে চলা জানান দেয় নতুন আবাহনের।


বসন্ত এলেই প্রেমিক বা প্রকৃতি প্রেমিক মাত্রই গেয়ে ওঠেন রবীন্দ্রনাথের সেই সুললিত গান ‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশী বাজে, এত পাখী গায়....।’


ফাগুনে পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তের সাজ-সাজ রব। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। মিলনের এ ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা। নাগরিক জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ ও একুশের বইমেলা।

বসন্ত আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্ত রঙিন পুষ্পিত রক্তের স্মৃতির উপর রঙ ছড়ায়। ১৯৫২ সালের আটই ফালগুন বা একুশে ফেব্রুয়ারির পলাশ রাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার যেন মিলে মিশে একাকার।

এবার বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে হওয়ায় অনেকেই কিছুটা বিভ্রান্তির মধ্যেই রাস্তায় বেরিয়েছেন বাসন্তি পোশাক আর ফুলের সাজে। বিশেষ করে অনেক নারী বাসন্তী রঙে নিজেকে রাঙিয়ে সুশোভিত করে তোলেন রাজধানীর রাজপথ, পার্ক, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরসহ পুরো নগরী।

বাংলা একাডেমির একুশে গ্রন্থমেলায়ও ছড়িয়েছে বসন্তের রঙ। আর রাজধানীর শাহবাগসহ অন্য এলাকায় ফুলের পসরা ও বিকিকিনিও বেশ জমে উঠতে দেখা গেছে আজ।

সাধারণত ভালোবাসা দিবসটি (১৪ ফেব্রুয়ারি) বছরগুলোতে পহেলা ফাল্গুনের পর দিন উদযাপনের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকই আজ বাসন্তি সাজে ঘর থেকে বের হয়েছেন। অনেকেই বের হওয়ার পরে জানতে পেরেছেন যে, আজ ৩০ মাঘ, পহেলা ফাল্গুন কাল শুক্রবার। অর্থাৎ এবার একই দিনে পড়েছে ফাল্গুন ও ভালোবাসার উৎসবের দিনটি।

কিন্তু তাতে কী? উৎসব-আনন্দ একদিন আগে কিংবা একদিন বেশি হলে ক্ষতি কী? এমনটি ভেবে চিরন্তন বসন্তের আমেজেই কাটিয়ে দিচ্ছেন আজকের দিনটিও। কবি তো বলেই দিয়েছেন, 'ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক, আজ বসন্ত'।

তাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কথায় তো আজ গাইতেই পারি:

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।

এএইচ/জেইউ